আমাদের পরিচিত সৌরজগৎ ছাড়াও মহাকাশে রয়েছে এরকমই আরো অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র পরিবার। রয়েছে অগুন্তি ছায়াপথ। এই সকল ছায়াপথ, সৌরপরিবার, গ্রহ, উপগ্রহ, নক্ষত্র-এর মধ্যে বেশিরভাগেরই হদিশ এখনো মেলেনি। পৃথিবী ছাড়াও অন্যান্য গ্রহে প্রাণের উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা চলেছে বিস্তর। বিজ্ঞানীমহলে কিন্তু এই নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা কল্পনা চলে সর্বদাই। তাঁদের অনেকেরই মতে পৃথিবীর জীবজগৎ ছাড়াও প্রাণের উপস্থিতি থাকাটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। অসংখ্য পৃথিবী সদৃশ গ্রহ ঘুরে বেড়াচ্ছে মহাকাশে। সেই গ্রহে রয়েছে প্রাণ, জল ও বায়ুমণ্ডল।
ক্যালিফর্নিয়ার এসইটিআই ইনস্টিটিউটের বিশিষ্ট মহাকাশচারী শেথ শ্যোসটাক বলেন এই সকল গ্রহগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে জোরকদমে। বিজ্ঞানীরা ক্রমাগত খোঁজ করে চলেছেন সেই সকল প্রাণের। তিনটি উপায়ে সন্ধান চালাচ্ছেন তাঁরা। শেথ শ্যোসটাক বলেছেন প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান পেলে আগামী কিছু বছরের মধ্যেই সেই যোগাযোগ সম্ভব হতে পারে। টেলিভিশন বা স্পেশাল এফেক্টস-এর মাধ্যমে নয় মানুষ স্বচক্ষে দেখতে পারবে সেই ভিনগ্রহের প্রাণীদের। পৃথিবী থেকে পাঠানো রেডিও সিগন্যাল পাঠানো হচ্ছে মহাকাশে, অন্য গ্রহে প্রাণের উপস্থিতি সত্যিই থাকলে যাতে সেখান থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। কিন্তু যে সব গ্রহ কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে, তাদের কাছে সেই সিগন্যাল পাঠাতে এখনও সময় লাগবে।
তবে বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর জীবজগতের মধ্যেই আছে হাজার হাজার প্রজাতি, তাদের সকলের ভাষা বুঝে তাদের সাথে তাদের ভাষায় যোগাযোগ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। শুধু তাই নয়, সমগ্র পৃথিবীতে মানুষের কথ্য ভাষার সংখ্যাও নেহাত কম কিছু নয়। কিন্তু একজন মানুষ সব ভাষায় কথা বলতে কখনোই সক্ষম নয়। ভার্বাল কমিউনিকেশন-এর ক্ষমতা মানুষ পায় ভৌগোলিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিকভাবে। সেখানে এক ভিনগ্রহের প্রাণী যাদের যোগাযোগের ধরণ সম্পর্কে পৃথিবীবাসীর কোনো আন্দাজই নেই তাদের অভিব্যক্তি কিরকম জেনে সংযোগস্থাপন করা অতটা সোজা হবে না। পৃথিবীবহির্ভুত মহাজাগতিক এই প্রাণী যেমন মানবজাতির থেকে হতে পারে অনেক শক্তিশালী আবার তেমনই এর বিপরীত ঘটনাটিও ঘটতে পারে।
উপরন্তু পৃথিবীর বাইরে থেকে আসা কোনো সিগন্যাল তাদেরই পাঠানো, না কি অন্য কোনো প্রাকৃতিক শক্তি থেকে প্রাপ্ত সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে, প্রয়োজন পরীক্ষার। তবে "জিপফ'স ল" ব্যবহার করলে এর নিস্পত্তি হলেও হতে পারে, এই ‘ল’ বলে একটি ভাষার সমস্ত শব্দকে একত্রিত করে তার ব্যবহারের পুনরাবৃত্তির প্রতিকূলে সাজালে তারা তৈরী করে পাওয়ার ‘ল’ যা ভিন্ন ভিন্ন শব্দের ব্যবহারের মাত্রা থেকেই যোগাযোগের ধরণটা বুঝতে সাহায্য করে। এই আইন দুটি ব্যবহার করে মানুষের ব্যবহৃত অনেক ভাষার হদিশ পাওয়া গেছে, বোঝা গেছে ডলফিনের অভিব্যক্তি প্রকাশের ভাষাও। তবে এটাই কি সবচেয়ে সহজ উপায় হতে পারে? নভোচারী শ্যোসটাক বলেছেন যে, যতটা সম্ভব বেশি তথ্য পাঠানো উচিত পৃথিবী থেকে, প্রয়োজনে গুগলের গোটা সার্ভারটিই পাঠানো হোক সিগন্যালের মাধ্যমে। কারণ যত বেশি তথ্য পাওয়া যাবে উত্তর হিসাবে তত ভাষাটির পাঠোদ্ধারে সুবিধা হবে। শতবর্ষ পূর্বে আবিষ্কৃত রেডিও সিগন্যালকে কাজে লাগিয়ে অবশেষে সন্দেহের অবসান হবে কিনা তাই দেখার। ভিনগ্রহবাসী প্রাণী যাকে ঘিরে রয়েছে বিশাল রহস্যের জট, তা খোলা কতটা সম্ভব হবে তার অপেক্ষায় এখন সকলে।