চাঁদমামার বাড়িতে বসে গবেষণা

গত তিনদিন ধরে সাড়ম্বরে উদযাপিত হল চাঁদে পাড়ি দেবার ৫০তম বর্ষ। নাসার পক্ষ থেকে ধুমধাম করে এই আয়োজন করা হয়েছিল। আমেরিকার মানুষজনও ছিলেন যথেষ্ট উত্তেজিত। বিভিন্ন ভাবে দিনটি পালিত হল।

 

    আর তার পর পরই আজ আমাদের ভারত থেকে চন্দ্রায়ন-২-এর উৎক্ষেপণের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই অনলাইনে এই উৎক্ষেপণ দেখার জন্য দর্শকাসন ভর্তী হয়ে গেছে। দুপুর ২.৪৩ মিনিটে এই উৎক্ষেপণ হবে। গতকাল উৎক্ষেপণের মহড়া সফল হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরো। এই চন্দ্রযানে কোনো মহাকাশচারী থাকছেনা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চন্দ্রযান-২-ই হবে পৃথিবীর মধ্যে প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফ্ট ল্যান্ডিং যান। তাই এই নিয়ে বিজ্ঞানী তথা গবেষকদের তুমুল উৎকণ্ঠা রয়েছে তা বলাই যায়। 

 

     এই কিছুক্ষনের ফাঁকে আসুন আমরা একটু জেনে নিই চাঁদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে। নাসার বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, চাঁদ- ই হতে পারে, সবচেয়ে সেরা ল্যাবরেটরি। মাত্র ৩ লক্ষ ৮২ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত চাঁদে গিয়ে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় যে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারি অনায়াসে।

(চাঁদের গবেষণাগারের নকশা, নাসার বিজ্ঞানীদের কল্পনায়) 

সেটা শুধুমাত্র দূরত্ব কম বলেই নয়, চাঁদে যেহেতু কোনও বায়ুমন্ডল নেই, সেটাও গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রহ্মাণ্ডে মোট চার ধরণের ফোর্স বা মূল বল রয়েছে। ১) স্ট্রং ফোর্স বা শক্তিশালী বল, ২) ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক ফোর্স বা তড়িৎ চুম্বকীয় বল, ৩) সফ্ট ফোর্স বা লঘু বল এবং ৪) গ্রাভিটেশনাল ফোর্স বা অভিকর্ষ বল। বিগ ব্যাঙ বা মহা বিস্ফোরণের পর এই চার ধরণের বলের বা ফোর্সের জন্ম হয়েছিল। ওই চার ধরণের বলই ব্রহ্মান্ডের মূল চালিকাশক্তি। যা ছিল, আছে এবং থাকবে যতদিন ব্রহ্মান্ড থাকবে। এবারে এই চারটি ফোর্সকে এক সূত্রে বাঁধার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা অনেক দিন থেকেই। ওই চারটি ফোর্স ব্রহ্মান্ডের আদিকালে একত্রিত অবস্থায় ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। সৃষ্টির কোনো এক সময়ে কী সেই এক সূত্রে গেঁথে থাকা চারটি বল বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল- এই খোঁজ চলছে বিজ্ঞানী মহলে বেশ অনেকদিন ধরেই। বিংশ শতকের ছ'য়ের দশকে বিজ্ঞানীরা প্রথম দেখিয়েছিলেন লঘু বল এবং তড়িৎ চুম্বকীয় বলকে একত্রিত করা যায়। তার পরেই সাতের দশকের গোড়ার দিকে তাত্বিক বিজ্ঞানীরা দেখান, ওই দুটি বলের সঙ্গে একত্রিত হতে পারে গুরু বল বা স্ট্রং ফোর্স-ও।

     এইবারে ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের যে খেলা পৃথিবীতে চলছে অনবরত, তার মধ্যেই লুকিয়ে আছে যত রহস্য। বিজ্ঞানীরা উল্টে পাল্টে সেই রহস্য ভেদ করারই চেষ্টা করেন। অত বিস্তারিত আলোচনায় আমরা নাই বা গেলাম। তবে শুধু এটুকু জানতে হবে প্রোটন কণার ক্ষয়ের হিসেব মেলানোটা যথেষ্ট জরুরি। যা পৃথিবীর মাটিতে সম্ভব হয়না কারন প্রতি মুহূর্তে পৃথিবীর ওপর আছড়ে পড়ছে মহাজাগতিক রশ্মি বা কসমিক রে। সেই রশ্মি যে কণাদের তৈরী করছে আমাদের বায়ুমন্ডলে ঢুকে, তাদের সকলকে আমরা থামাতে পারলেও নিউট্রিনোদের থামানো সম্ভব হয়নি। তাই মাটির নিচে গবেষণাগারে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় নিউট্রিনোরাই। তাই প্রোটন কণার ক্ষয় নিখুঁতভাবে বোঝা সম্ভব নয়। চাঁদে যেহেতু বায়ুমন্ডলের ছিটেফোঁটাও নেই, তাই মহাজাগতিক রশ্মি চাঁদে পৌঁছে নিউট্রিনোদের তৈরী করতে পারেনা। সেই কারনেই চাঁদে কয়েক'শ ফুট মাটির নিচে প্রোটন কণা ক্ষয়ের গবেষণাগার অনায়াসেই বানানো যাবে

(চাঁদের গবেষণাগারের নকশা, নাসার বিজ্ঞানীদের কল্পনায়) 

আর সেটাই যদি বানানো যায়, তাহলে ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি রহস্যের জট খোলা সম্ভব বলে মনে করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এক্স রে, গামা রে পুরোপুরি শোষিত হয়ে যায় বলে এগুলি নিয়ে পৃথিবীতে বসে গবেষণা করা যায়না। সেই কারণেই মহাকাশযান পাঠাতে হয় চাঁদে। যেহেতু চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই, তাই যদি সেখানে গবেষণাগার বানানো যায়, তাহলে চাঁদে বসেই গবেষণা করা যাবে। মহাকাশযান পাঠাতে হবেনা। তাছাড়া অ্যান্টি ম্যাটারের অস্তিত্ব প্রমাণের পরীক্ষাও অনেক নিখুঁত ভাবে করা যাবে চাঁদে। বায়ুমণ্ডল নেই বলে মহাজাগতিক রশ্মির ঝাপটা চাঁদে অনেকটাই কম সহ্য করতে হবে, তাই এই বিষয়ের যে কোনো রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষাই চাঁদে বসে করা অনেক সহজতর হবে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানী মহল।

 (চাঁদের গবেষণাগারের নকশা, নাসার বিজ্ঞানীদের কল্পনায়) 
    

তাহলে জানলেন তো, এবারে শুধু অপেক্ষা। নাসা চাঁদের গবেষণাগারের সম্ভাব্য নকশাও তৈরী করে ফেলেছে। তাই কে বলতে পারে, আমার-আপনার মেধাবী ছেলেটি বা মেয়েটি একদিন চাঁদের মাটিতে পা দেবে না সেই গবেষণাগারে বসে পৃথিবীর আদি রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য!

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...