মানব সভ্যতায় রেনেসাঁ যুগের গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায় শিল্প, বিজ্ঞান, সাহিত্য, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিকিৎসা এবং চিত্রকলায়। ইতালীয় রেনেসাঁসের শাশ্বত চিত্রশিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। একাধারে তিনি ছিলেন স্থপতি, দার্শনিক, সংগীতজ্ঞ, আবিস্কারক, ভবিষ্যত বিজ্ঞানের রূপকার, সময় যন্ত্র শিল্পী। রেনেসাঁর যুগে যেভাবে চিত্রকলা এবং স্থাপত্যের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছিল একইসাথে বিজ্ঞানের বিশেষ কিছু দিক নতুন রূপে আগামীর জন্য আলোকিত হয়েছিল এ যুগেই। এই দুইয়ের ক্ষেত্রেই যার সমান অবদানগুলো কালোত্তীর্ণ হয়ে আছে তিনি লিওনার্দো। ১৪৫২ সালের ১৫ই এপ্রিল ফ্লোরেন্সের ভিঞ্চি নগরের একটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন 'লেওনার্দো দাই সের পিয়েরো দা ভিঞ্চি'। তাঁরই জন্মদিনকে সম্মান জানিয়ে পালন করা হয় 'ওয়ার্ল্ড আর্ট ডে'।
'লেওনার্দো দাই সের পিয়েরো দা ভিঞ্চি' অর্থ লিওনার্দো যে পিয়েরোর পুত্র হয়ে জন্মেছেন ভিঞ্চি নগরীতে। লিওনার্দোর জীবনের অন্যতম চিত্রশিল্প 'মোনালিসা'-র কথা সবারই জানা। তবে চিত্রকলা জীবনের প্রথম ছবিটা তিনি এঁকেছিলেন অনুরোধে। তিনি এঁকেছিলেন আগুন নির্গত হওয়া একটি সাপের মুখ। যার অনুরোধে ছবিটি ছেলেবেলায় এঁকেছিলেন সেটি এত মনোমুগদ্ধকর হয়েছিল যে অনুরোধকারী বেশ ভালো দামে ছবিটি শেষে কিনে নিয়ে ছিলেন। ১৪ বছর বয়স অব্দি আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন শিক্ষা গ্রহণ করেননি লিওনার্দো। বরং প্রকৃতিতেই মুগধ হয়ে সময় কাটিয়েছেন অনেকটাই। এরপর রেনেসাঁ যুগের আরো একজন চিত্রশিল্পী, স্থাপত্যবিদ এবং স্বর্ণকার ডেল ভেরোচ্চির কাছে শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন তিনি। কথিত আছে লিওনার্দোর অতি নিপুন সৃষ্টি “দা ব্যাপ্টিজম অফ ক্রাইস্ট” দেখার পর নিজের আঁকা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভেরোচ্চি।
ধ্রুপদ যুগের শিল্পী ভিঞ্চির বিখ্যাত দুটি শিল্পকর্ম হল "দা লাস্ট সাপার" এবং "ভার্জিন অব দা রকস", ১৪৮২ থেকে ১৪৯৯ সালের মাঝামাঝি তিনি চিত্রকর্ম দুইটি আঁকার দায়িত্ব পেয়েছিলেলন। এসব ছবির বিশেষত্ব ছিল ছবির সাথে লুকিয়ে থাকা বার্তা। ঘটনা, স্থান, সময়, ব্যক্তি বিশেষে, "দা লাস্ট সাপার" ছবিটি নিয়ে এখনো নানা মন্তব্য আর গবেষণায় উঠে আসে নানান তথ্য। প্রকৌশলীগত দিক থেকেও বিজ্ঞানে ভিঞ্চির অবদান আজও কখনও অনুস্মরণীয় কখনও বা রহস্যের। ভেনিসে তিনি চাকরি পেয়েছিলেন একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানিতে যেখানে গোটা একটা শহরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে স্থানান্তর যোগ্য একটি ব্যারিকেট তৈরী করে প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। লিওনার্দোর বিভিন্ন আঁকায় এবং পত্রিকায় উঠে এসেছে হাইড্রোলিক পাম্প,দানার মর্টার সেল, বাষ্পকামান, যান্ত্রিক সৈন্য থেকে আজকের বিমানের প্রাথমিক নকশা।
রেনেসাঁ যুগে তৈরী করা এককেটি দূরদৃষ্টি সম্পন্ন শিল্পকলা সে যুগে অবাস্তব মনে হলেও আজকের পৃথিবীতে সেসব রীতিমত গভীর গবেষণার বিষয়বস্তু। সৃষ্টির জগতে অতুলনীয় নৈপুণ্যের অধিকারী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি। তার জন্মদিনকে সম্মান জানিয়ে বিশ্বে সৃজনশীলতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ঘোষণা করা হয় ওয়ার্ল্ড আর্ট ডে। ২০১২ সালের ১৫ই এপ্রিল, অনুষ্ঠানিক ভাবে গুয়াদালাজারা ইন্টারন্যাশনাল আর্ট এসোসিয়েশনের ১৭তম সাধারণ অধিবেশনে দিনটিকে ওয়ার্ল্ড আর্ট ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়।