অভিনেতা। নাট্যকার। নাট্য নির্দেশক। শিক্ষক। চিন্তাবিদ। লেখক। গবেষক। ‘থিয়েটার অ্যাক্টিভিস্ট’।
তবে নিজেকে তিনি বলতেন ‘ আমি শিল্পী নই, প্রপাগান্ডিস্ট’। আসলে তিনি ভারতীয় থিয়েটার এবং সিনেমার জগতে মহীরুহের ছায়া। দীর্ঘ চারদশক ধরে তাঁর ছায়াতেই পুষ্ট হয়েছে ভারতীয় নাট্য জগৎ।
সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, ‘উৎপল যদি রাজি না হত, তবে হয়তো আমি ‘আগন্তুক’ বানাতামই না।’
উৎপল দত্ত ওরফে উৎপলরঞ্জন দত্ত। আদ্যন্ত নাট্য প্রাণ মানুষ। নাটকের জন্য কারাবাস ভোগ করতে হয়েছে।কিন্তু, তাঁর সিনেমায় আসাটা একেবারেই ‘পেটের দায়ে’।নিজেই জানিয়েছিলেন, নাটক থিয়েটার তাঁকে আনন্দ দিলেও সিনেমা করতে আসা নিতান্ত পেটের দায়ে। মধু বসুর ‘মাইকেল’ ছবিতে নাম ভূমিকায় দেখা গেল তাঁকে। এই ছবি দিয়েই সিনেমার জগতে অভিনেতা হিসেবে পা রাখা।
শেক্সপিয়রিয়ানা ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার কোম্পানি ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণে অন্য ভাবনা ভাবতে হয় তাঁকে। ‘ওথেলো’ নাটকের শো চলার সময় মাইকেলের চরিত্রের জন্য তাঁকে নির্বাচন করেন মধু বসু।
অসংখ্য বাংলা ও হিন্দি বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, অজয় কর, তরুণ মজুমদার, তপন সিংহ, হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়, শক্তি সামন্ত কে নয়! হাড়কাঁপানো ভিলেন থেকে কৌতুক অভিনয় সবেতেই দর্শকদের বুঁদ করে রাখতেন তিনি। তাঁর সংলাপ আজও প্রবাদ হয়ে আছে।
তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি ‘সাত হিন্দুস্থানী’। পরিচালক কে আব্বাস। তাঁর অভিনীত চরিত্ররা সব সময় নানা রঙের মানুষ। নানা স্তর থেকে তাঁদের উঠে আসা। হীরক রাজার দেশে’র যিনি হীরকরাজ, তিনিই আবার ‘পদ্মা নদীর মাঝি’র হোসেন মিয়া। কখনও ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’-এর মগনলাল মেঘরাজ, ‘অমানুষ’-এর মহিম ঘোষাল। ‘আগন্তুক’-এর মনোমোহন মিত্র-এর আড়ালে প্রছন্ন সত্যজিৎ- ও তিনিই। ‘জন অরণ্য’র বিশুদা’কে ভুলতে পারবে না চলচ্চিত্রপ্রেমীরা।