কেরালার এই হোটেলের একটি রুম চিরকাল মারাদোনার

কেরালার কান্নুর রেল স্টেশন থেকে কয়েক পা এগোলেই এক হোটেল। আর পাঁচটা সাধারণ হোটেলের থেকে সেভাবেই আলাদা করে চোখে পড়ার কিছু নেই। হোটেল সার্ভিসও আর পাঁচটা হোটেলের মতোই। তবু এই হোটেল গোটা বিশ্বের টান। বিশেষ করে ফুটবল পাগল জনতার। কেরালা সফরে এলে একবার অন্তত তাঁদের আসতেই হয় এখানে।

এই হোটেলেই ৩০৯ নম্বর রুম আজও রাখা আছে মারাদোনার জন্য। ২০১২ সালে কেরালার কান্নুরে আসেন দিয়েগো মারাদোনা। ফুটবল পাগল কেরালা বুক দিয়ে আগলে রেখেছে ফুটবল রাজপুত্তুরের ভ্রমণ স্মৃতি। প্রায় ৫০ হাজার মানুষের উচ্ছ্বাসিত অভ্যর্থনায় ভেসে গিয়েছিলেন তিনি।

ভারতের মাত্র দুই রাজ্যে পা রেখেছিলেন মারাদোনা কেরালা আর কলকাতা। দুই রাজ্যের ভালোবাসাই অবাক করেছিল তাঁকে। কেরালাবাসীর উদ্দ্যেশে তিনি বলেছিলেন ‘ভালোবাসি কেরালা’। গর্জন উঠেছিল জনসমুদ্র।

কেরালার ব্যবসায়ী ববি চেম্মানুর রাজ্যে এনেছিলেন তাঁকে। বিদেশে একবার আলাপ হয়েছিল আর্জেন্টিনার ফুটবল সম্রাটের সঙ্গে। সেখানেই নিজের জ্যুয়েলারি চেনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হওয়ার জন্য তাঁকে রাজি করান তিনি। সেই সূত্রেই কেরালায় এসেছলেন মারাদোনা।

ভারতীয় ফুটবল তারকা আইএম বিজয়ন ছিলেন তাঁর সঙ্গে এক মঞ্চে। দক্ষিণী সুরের মূর্ছনায় পা মিলিয়েছিলেন তিনি। জন্মদিনের আগেই ভক্তদের অনুরোধে কেক কাটতে হয় তাঁকে। কেকের ওজন ছিল ৩০ কেজি!

এই ভিভিআইপি অতিথির জন্য কান্নুর রেলস্টেশনের পাশের চারতারা হোটেলটিকেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল। হোটেলের মালিক এন রবিন্দ্রনকে এক বিশেষ অতিথি আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তারই অংশ হিসেবে হোটেলের অন্দরসজ্জাতেও কিছু পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেওয়া হয়।

রবিন্দ্রন নিজে ফুটবলপাগল, তাই মেনে নিয়েছিলেন প্রস্তাব। কিন্তু তখনও জানতেন না সেই বিশেষ অতিথিটিকে। যখন জানতে পারলেন তখন বিস্ময়ে  বেশ খানিকক্ষণ কথা সরেনি মুখে। তাঁর নিজের ভাষায়, ‘সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আমায় সুযোগ দিয়েছেন স্বয়ং ঈশ্বরকে সামনে থেকে দেখা আর সেবা করার!’

maradona-1

২০১২ সালের ২৩ আর ২৪ অক্টোবর। দিনদুটো স্পষ্ট মনে আছে তাঁর। জীবনে কোনওদিন ভুলতে পারবেন না, এই দুটো তারিখ। ওই ৭২ ঘন্টার প্রতিটা মুহূর্তের খুঁটিনাটি তাঁর মনে। মনে হয় যেন গতকালের স্মৃতি।  মারাদোনা বোধহয় নিজেও ভাবতে পারেননি আর্জেন্টিনা থেকে কোনও সুদূরে নারকেলগাছ, সমুদ্র আর পাহাড় ঘেরা এক ছোট্ট রাজ্যে এএতো ভালোবাসা রাখা ছিল তাঁর জন্য।

হোটেলে পা দিতেই কর্মীদের আন্তরিকতা মুগ্ধ হয়ে যান ফুটবল রাজপুত্র। শুধু মাত্র এক হেভিওয়েট অতিথিকে চোখ ধাঁধানো অভ্যর্থনা নয়, সেখানে ছিল হৃদয় নিংড়ানো আবেগ আর স্বতঃফূর্ত ভালোবাসা। কেরালার নিজস্ব ঐতিহ্য রীতিতে তাঁকে বরণ করেন রবিন্দ্রন। অভিভূত মারাদোনা তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। রবিন্দ্রনের কথায় আমার মনে হয়েছিল, ‘আমি যেন ভগবানের আলিঙ্গন পেলাম’।

 

মারাদোনা কী খেতে ভালোবাসেন? কেরালায় কী খাবেন তিনি? এসব ভেবে কোচি থেকে এক শেফকে কান্নুরে নিয়ে আসেন তিনি। রাশিয়ান ফুডে এক্সপার্ট তিনি। এখানকার রাশিয়ান স্যালাড খুব পছন্দ হয়েছিল মারাদোনার।

তাঁর ঘুরে যাওয়ার পর কান্নুরের এই হোটেলে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে রাশিয়ান স্যালাড। জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে হোটেলের ৩০৯ ঘরটিও। সেটি এখন ‘মারাদোনা স্যুইট’। ১৫০টির বেশি ছবি, তাঁর ব্যাবহার করা প্লেট, গ্লাস, কাঁটাচামচ, পিলোকভার আর সিগারে সাজানো। প্রায় ছোটখাটো মিউজিয়ামের চেহারা।

তবে এই সাজিয়ে তোলা শুধুমাত্রই ভালোবাসার টানে। ইচ্ছে করলেই বুক করা যায় না। যে কেউ দেখতে পারে ঘুরে, কিন্তু থাকতে পারেন একমাত্র তাঁরাই যাদের প্যাশন maradona-2। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর এই স্যুইটে অতিথি ছিলেন এক পাইলট। এই রুমেই থাকতে চেয়েছিলেন তিনি।

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...