বাংলা ছবির সোফিয়া লোরেন

১৯৪২ সাল, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলছে৷ বার্মা থেকে পায়ে হেঁটে একমাস তেইশ দিনের পথ পেরিয়ে বাবার সঙ্গে পা রাখলেন বারো নম্বর ল্যান্সডাউন রোডে।
পিছনে পড়ে রইল চেনা দেশ। চেনা শহর।

সদ্য চেনা কলকাতাটা খুব সহজ হয়ে ধরা দেয়নি তাঁর জীবনে। বারবার ভাঙ্গন এসেছে। বাসা বদলেছে। বদলেছেন তিনিও। কিন্তু বদলায়নি ভিতরের মানুষটা। জীবন তাঁর জার্নি নীতা হয়েই।

তারা জীবনের অন্তরালে ভাঙ্গনের গল্প ভারী অচেনা হয়ে ধরা দেয়। বুকের গভীরে দগদগে ঘা লুকিয়ে আলোর দিকে এগিয়ে চলা।
অজস্র কাঁটার গল্পে মোড়ানো ছিল তাঁর জীবন। সেসব নিয়েই মিচকিনা শহরের মেয়ে কৃষ্ণা বন্দোপাধ্যায় হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সিনেমার ‘সোফিয়া লোরেন’। সুপ্রিয়া চৌধুরী।

বুফোঁ খোঁপা, উইং চোখ, মদালষা দৃষ্টি সব মিলিয়ে তিনি যেন এক তছনছের মেয়ে। চোখ ধাঁধানো রূপ। কাটা হীরের মতো আভিজাত্য মিশে আরও উজ্জ্বল।

কখনও নীতা, কখনও আম্রপালী কখনও বা বনপলাশীর পদাবলী। প্রতি সিনেমায় তিনি নতুন হয়ে উঠতেন। দুর্লভ সব এক্সপ্রেশনে বলে বলে গোল দিতেন সহ-অভিনেতাকে। পাশে যেই থাক, নজর তাঁর দিকে যাবেই।

শোনা যায় আম্রপালী হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন স্বয়ং তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়। এই ছবি দিয়েই প্রথম নজরে আসেন তিনি।
রিল লাইফ আর রিয়েল লাইফ দুই ক্ষেত্রেই খোলা খাতার মতো ছিল জীবন। বেঁচেছেন নিজের শর্তে। ছবির দুনিয়ায় পা রাখতে বাধা কম আসেনি।

বাংলা সাহিত্যের বনফুল বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন তাঁর জামাইবাবু। বেণুর সিনেমায় আসাকে খুব ভালোভাবে মেনে নেননি তিনি। কিন্তু প্রবল পারিবারিক বাধার মুখেও ঢাল হয়েছিলেন তাঁর বাবা। নামকরা ব্যারিস্টার ছিলেন। ডাকাবুকো ছোটমেয়ের ওপর ছিল প্রবল ভরসা। তাই বাংলা সিনেমা খুঁজে পেয়েছিল তার ‘সোফিয়া লরেন’কে।
রান্নাঘর থেকে শুটিং ফ্লোর সব জায়গায় তিনি ছাঁচ ভেঙে নিজের মতো সেরা। বিকল্পহীন সুপ্রিয়া ।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...