মাত্র ২১ বসন্তের জীবন। তবু সে জীবনই রক্ত কুসুমের রঙে লাল। এত আলো, এত আভা যে তা আজও জাগিয়ে রাখে মানুষকে। এই পৃথিবীকে শিশুর বাসভূমি করে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন স্বল্পায়ু কবি। যুদ্ধ, মারী, ভয় মন্বন্তর কোন কিছুই আচ্ছন্ন করতে পারেনি কিশোর কবিকে। সুকান্ত ভট্টাচার্য।
জন্ম শেষ শ্রাবণে। ১৯২৬-এর ১৫ আগস্ট। দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটে। দাদামশাই সতীশচন্দ্র ভট্টাচার্যের বাড়ি। বাবা নিবারণ ভট্টাচার্য। মা সুনীতি দেবী। ছোটবেলাটা কেটেছিল দক্ষিণ কলকাতার অলি-গলিতেই। মামাবাড়িতে খোলামেলা আবহাওয়া। দিনের কাজ শেষ হলে মা সুনীতিদেবী রামায়ণ-মহাভারত পাঠ করতেন। পাঠের সুর, মহাকাব্যের ছন্দ মন টানত শিশুকে। সেই থেকেই মনের মধ্যে বপন হয় কবিতার বীজ।
১৯৩৭-এ মা হারা হলেন। বয়স তখন সবে এগারো। কর্কট রোগ নিঃশেষ করেছিল সুনীতি দেবীকে। চেনা পরিসর থেকে অনেক দূরেই মধুপুরে।
মায়ের মৃতু আরও অস্থির করে তুলল সুকান্তকে। ছন্নছাড়া কিশোরকে কাছে টেনে নিলেন বন্ধু কবি অরুণাচল বসুর মা সরলা বসু। মায়ের মৃত্যু সুকান্তের জীবনের এক ক্রান্তিলগ্ন।
লেখা লিখির শুরুটা স্কুল জীবনেই। বয়স আট কী নয়।লাজুক, স্বল্পবাক, আপনভোলা কিশোর সুকান্ত। ফাঁকা সময়ে কবিতার ছন্দে ভরে ওঠে বাঁধানো খাতা। মানুষের কথা, সময়ের কথা।
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী পড়ে মনে হয়েছিল, ‘ধর্মগ্রন্থের সঙ্গে সমান আদরে এই বই সকলের ঘরে রাখা উচিত’।
কিন্তু স্কুল সম্পর্কে আজীবন উদাসীন। বারবার অঙ্কে ভুল হয়।
রেডিয়োর প্রতি ছিল অদ্ভুত দুর্বলতা। কানে অল্প কম শুনতেন। রেডিয়োতে কান লাগিয়ে থাকতেন। গান, নাটক শুনতেন। পরিচয় হয়েছিল রেডিয়ো ডিরেক্টর নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ‘গল্প দাদুর আসরে’ আমন্ত্রণ পেলেন। ছোট থেকেই মরমে পশেছিলেন রবিঠাকুর। ছোটদের আসরে পাঠ করলেন, ‘শীতের আহ্বান’।
রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে পড়লেন নিজের লেখা কবিতা ‘ প্রথম বার্ষিকী’। সেই কবিতায় সুর দিয়ে গান গাইলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক।
মাত্র ৭-৮ বছর লেখালেখির সুযোগ পেয়েছিলেন। তবু সেই সময়রেখার মধ্যেই যে স্বপ্নের ঢেউ রেখে গিয়েছেন তা আজও উছল স্রোতে বহমান প্রজন্ম স্রোতে। প্রতি ক্রান্তিকালে ফিরে ফিরে আসে সুকান্তের কলম থেকে উছলে আসা তরল বহ্নি। আসলে যা বঞ্চিত মানুষের স্বর।