মৃণাল থেকে সত্যজিৎ সবার পছন্দে শুভেন্দু

সময়টা ষাটের দশক। সাদা-কালোর যুগ। ম্যাটিনি-পর্দা আলো করে আছেন বাঙালির দুই-পুরুষ। তাদের নিয়ে দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে যুযুধান বাঙালি। একদিকে উত্তম আর একদিকে সৌমিত্র।
তবু তারই মাঝে চোখ কাড়ল আরও এক পুরুষ
টল, ডার্ক এন্ড হ্যান্ডসাম।

যে তিন বিশেষণ পুরুষ সৌন্দর্য বিচারে সবচেয়ে জনপ্রিয় মাপকাঠি তার সবগুলোই খেটে যায় তাঁর জন্য। বিশেষনের গয়না বরং কয়েকটা বেশিই ছিল তাঁর।
ধারালো চোখমুখ। সব থেকে টানে হাসিটা।

বাংলা ছবির উত্তমময় দুনিয়ায় হাসিতে দর্শকদের বাগ মানানো বড় সহজ কথা নয়। তবু তিনি পেরেছিলেন।
নাম তাঁর শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়। ডাক্তারির ছাত্র। সিরিয়াস পড়ুয়া। বাবা ডাক্তার। তাঁর ইচ্ছেতেই মেডিকেল পড়তে আসা। এদিকে অভিনয়ে টান।

শ্রীরঙ্গমে শিশির ভাদুড়ীর ‘মাইকেল মধুসূদন’ নাটক দেখে এমন মুগ্ধ হলেন যে জীবনের সঙ্গে জুড়ে নিলেন অভিনয় শব্দটাকে।
ডাক্তারি পড়তে পড়তেই আইপিটিএ –তে যোগদান।
এমবিবিএস পাশ করে পুরোদস্তুর ডাক্তারি। তবু নেশা যে ছাড়ে না।
অভিনয়ের নেশা।

SubhenduChatterjee1

গুরু জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়।
তাঁকে মঞ্চে দেখেই নিজের ছবির জন্য পছন্দ করেছিলেন মৃণাল সেন।
তাঁর ছবিতেই পেলেন প্রথম ব্রেক। ছবির নাম 'আকাশকুসুম'। সন ১৯৬৮। সেই ছবির অভিনয় দিয়ে চোখে পড়ে গেলেন সত্যজিৎ রায়ের।

ডাক পড়ল 'চিড়িয়াখানা'র জন্য।
ধীরে ধীরে 'হংসমিথুন', 'চৌরঙ্গী', 'আরোগ্য নিকেতন' এমন বহু ছবির নাম জুড়ে গেল ডাক্তারের সঙ্গে।
সব ছবিতেই মেধাবী অভিনয়ের ছাপ। অভিনয় করতেন হৃদয় দিয়ে। ছবির দুনিয়াকে ভালোবাসতেন জীবন দিয়ে।

এমবিবিএস পাস করার পর সিভিল ডিফেন্সে চাকরি পেয়েছিলেন। কলকাতা কর্পোরেশনের মেডিকেল অফিসারের দায়িত্বও সামলেছিলেন।

তাঁর চিকিৎসক জীবনের অভিজ্ঞতা ছবির দুনিয়াতেও কাজে লাগত। সেই ভূমিকায়তেও তিনি সমান দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য ছিলেন।
উত্তমকুমারের সঙ্গে ছিল দাদা-ভাইয়ের সম্পর্ক। তাঁর চিকিৎসাও করেছেন। শুধু উত্তমকুমার নয়, অনেক অভিনেতাকেই চিকিৎসা করেছিলেন।

শ্যুটিং-এ গিয়েও তিনি টিমের ধনন্তরি। সঙ্গে ওষুধের বাক্স নিতে ভোলেন না সাধারণ মানুষের চিকিৎসাও করেছেন সেখানে।
সেটে অভিনেতা। পরিচালকের নির্দেশ ছাড়া চোখের পাতা পর্যন্ত ফেলেন না, আবার জরুরী অবস্থায় তিনিই ত্রাতা। #ডাক্তারবাবু। দুই ভূমিকাতেই সফল তিনি।

বিশিষ্ট এই অভিনেতার জীবনের রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে চিরবিদায় নেন আজকের দিনে। সাল ২০০৭।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...