ভাস্কর চিন্তামণি

সন ১৯৪৮ ,সেবার গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে চোখ ধাঁধানো কৃতিত্ব দেখিয়ে সোনা জিতে নিয়েছিল ভারতীয় হকি দল। সে বছর অলিম্পিকে রূপোও জিতেছিল ভারত। তবে সেই পদক ক্রীড়াক্ষেত্র থেকে আসেনি। ৩৩ বছর বয়সী এক বাঙালি তরণ পেয়েছিলেন সেই স্বীকৃতি। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্কুলের ছাত্র। খড়গপুরের ছেলে ভাস্কর্য বিভাগে ছিনিয়ে এনেছিলেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।  সেই সময় স্থাপত্য, সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য এই চার বিভাগেও পুরস্কার প্রদান করত অলিম্পিক কমিটি। শুনতে কিছুটা আশ্চর্য লাগলেও ১৯১২ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত ১৫১ টি পদক প্রদান করা হয়েছিল। আধুনিক অলিম্পিক প্রতিযোগিতার জনক ব্যরন পিয়ের দ্য কুবার্তোর স্বপ্ন ছিল ক্রীড়ার সঙ্গে শিল্পচর্চাকে মেলাবেন।

অলিম্পিকে শিল্প সংস্কৃতিতে পুরস্কার শেষবার দেওয়া হয়েছিল ১৯৪৮-এ। সেবারই সেই পুরস্কার পেয়েছিলেন বাংলা থেকে চিন্তামণি কর। তাঁর ‘দ্য স্টেজ’ ভাস্কর্যের জন্য সম্মানিত হয়েছিলেন অলিম্পিকের মঞ্চে। আঁকা শেখার শুরু  তদানীন্তন অধ্যক্ষ ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদারের কাছে। ওড়িশার প্রথাগত মন্দির ভাস্কর্যের শিল্পী গিরিধারী মহাপাত্র ও ভিক্টর জিওভানেল্লির কাছ থেকে উনি ভাস্কর্য শেখেন।

The-Stage_Chintamoni-kor (1)

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট থেকে পাশ করেছিলেন শিল্পকলায়। তারপর প্যারিসে। ১৯৩৮ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত তিনি প্যারিস আর লণ্ডনে। তারপর ফিরে এসেছিলেন বাংলায়। আজীবন সেখানেই। অলিম্পিকের মঞ্চে যখন তিনি গিয়েহিলেন তখন চিন্তামণি কর ব্রিটিশ নাগরিক। প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন গ্রেট ব্রিটেনের। তাই তাঁকে ‘টেকনিক্যালি’ ভারতীয় বলা যায় না।তবে তিনি পুরোপুরি ভারতীয়। নিজের শিল্পকীর্তির জন্য ভারত সরকার ছাড়াও ফরাসি রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।

Chintamani-art

পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুরে চিন্তামণি করের জন্ম। খুব ছোটবেলায় চলে আসেন ঢাকুরিয়ায়। সেখানেই ছোট থেকে বড়বেলা। কসবার চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের ছাত্র ছিলেন। ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট অধ্যক্ষের কাছে আঁকা শেখার শুরু। পরবর্তী সময়ে ওড়িশার মন্দির ভাস্কর্যের শিল্পী গিরিধারী মহাপাত্র ও ভিক্টর জিওভানেল্লির কাছ থেকে ভাস্কর্য শেখেন।

বিদেশের পড়াশোনা শেষ করে যুদ্ধের কারণে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন। কর্মময় তাঁর শিল্পী জীবন। ভারতীয় সংসদের অন্দরমহল থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাঁর সৃষ্টি সংরক্ষিত আছে।

Chintamani-kar-work

১৯৭৭ সালে নয়াদিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে তাঁর ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য 'জাস্টিস’ স্থাপিত হয়। সংসদের সেন্ট্রাল হলে সুভাষচন্দ্র বসুর যে চিত্রকর্মটি তাঁর করা। কলকাতার আউট্রাম ঘাটের কাছে ২৫ শে জানুয়ারি: ১৯৭৬ তারিখে স্থাপিত বঙ্কিমচন্দ্রের মূর্তি। এছাড়া তিনি রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা গান্ধী,রাজেন্দ্রপ্রসাদ, স্যার মরিস ওয়্যার, বুদ্ধ ইত্যাদির মূর্তি গড়েছেন। জীবনের উপান্তে সারাজীবনের সৃষ্টি ও সংগ্রহ নিয়ে তিনি নরেন্দ্রপুরে তাঁর বাসভবনে সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছিলেন। পরবর্তী সময়ে সেই সংগ্রহশালা তিনি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরকে দান করেন। বাসভবনের অংশটি দিয়ে গেছেন ভাস্কর ভবন অ্যাডমিনিস্টেশন ও মেন্টেন্যান্স ট্রাস্টের হাতে।

  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...