৬৭ বছরের কেরিয়ার। শুরু হয়েছিল মাত্র তিন বছর বয়সে। এত কনিষ্ঠ নৃত্যশিল্পী বলিউড সেভাবে দেখেনি।
একাধারে নৃত্যশিল্পী। শিক্ষক। কোরিওগ্রাফার।
শ্রীদেবী থেকে মাধুরী হয়ে করিনা কাপুর কিংবা সোনাক্ষী সিনহা সব্বার তিনি ‘মাস্টারজী’। গোটা বলিউড তাঁকে এই নামে চিনত। তিনি যে ব্র্যান্ড সরোজ খান! বলিউডের প্রথম মহিলা কোরিওগ্রাফার।
মঞ্চ থেকে পর্দা সবর্ত্র।
আসল নাম নির্মলা নাগপাল। কিন্তু সে নাম আড়ালেই চাপা পড়ে গিয়েছে। কেরিয়ার যখন শুরু করেছিলেন তখন মায়ানগরীতে বৈজয়ন্তীমালা-মধুবালাদের যুগ।
তিন বছর বয়সে কেরিয়ার শুরুর কাহিনি আপাতভাবে অবাস্তব মনে হলেও ভীষণ সত্যি!
বয়স যখন সবে দুই পেরিয়েছে একদিন সরোজের মা দেখলেন মেয়ে হাতে নাচের মুদ্রা। প্রথম প্রথম শিশুর খেয়াল মনে হলেও পরে দেখা গেল খেয়াল মোটেই খেয়াল নয়।
মা তখন দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায়। শিশু সরোজকে সঙ্গে নিয়েই একদিন গেলেন চিকিৎসকের কাছে। কথায় কথায় জানান মেয়ে ‘শ্যাডো প্র্যাকটিস’ করে। আপন খেয়ালে হাত ঘোরায়। কী যে করতে চায় তিনি ঠিক বুঝতে পারছেন না।
চিকিৎসক বলেন, “হয়ত নাচে আগ্রহ আছে মেয়ের।”
ঘটনাচক্রে সেই চিকিৎসক যুক্ত ছিলেন ছবির দুনিয়ার সঙ্গে। তিনি সরোজের মাকে পরামর্শ দেন, নাচের খরচ জোগানো হয়ত কঠিন। কিন্তু মেয়েকে ছবিতে অভিনয়ের জন্য ভাবতে পারে তারা। সেখানে নাচের দলের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রশিক্ষণের সুযোগ মিলবে।
সরোজের পরিবার রাজী হয়ে যায়। সেভাবেই শুরু। সালটা ১৯৫০।
মাত্র তিন বছরে পেশা প্রবেশ নিয়ে কখনও আফসোস ছিল না বলিউডের মাস্টারজীর। বরং পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরেছেন এ ছিল তাঁর কাছে অত্যন্ত তৃপ্তির ব্যাপার।
দেশভাগের উত্তাল সময়ে পাকিস্তান থেকে প্রায় এক বস্ত্রে এদেশে চলে আসতে হয় তাঁর পরিবারকে। ধনী ব্যবসায়ী পরিবার। কিন্তু দেশভাগের থাবায় মুহূর্তে কপর্দকহীন।
ঘর ছাড়ার সময় পরিবারটি কিছুই সঙ্গে নিতে পারেনি। সম্বল বলতে ছিল সঞ্চিত গহনা আর পুঁজি। পরিবারের কর্তা ভেবেছিলেন তাই দিয়েই বোম্বাই শহরে এসে নতুন করে শুরু করা যাবে জীবন।
পরিবারটি বোম্বাই শহরে এসে থামল। কিন্তু মালপত্র মেলাবার সময় ঘটল আর এক ট্র্যাজেডি। দেখা গেল সর্বস্য রাখা ছিল যাতে খোয়া গিয়েছে সেই ব্যাগ।
কেউ সচতুর ভাবে টাকা-গহনা সরিয়ে সেই জায়গায় রেখে গিয়েছে ময়লা জামাকাপড়। আর কিছু করার নেই!
বলিউডের সর্বকালের অন্যতম সেরা কোরিগ্রাফারের জীবনের গল্পটা শুরু হয়ে গিয়েছিল এখান থেকেই। তাঁর জন্মেরও আগে।
সারা জীবন অজস্র ভাঙনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেছিলেন নৃত্যগুরুকে। পরের বছরই সন্তানের মা। কিন্তু স্থায়ী হয়নি সেই বিয়ে। ঝড় উঠেছে জীবনে। কিন্তু সব ঝড়কে দিনে ঠিকানা দিয়েছিলেন নাচের ছন্দে। যতবার ভাঙন এসেছে ততবার নতুন করে মাটি জেগেছে তাঁর বুকে। সে মাটি তালে-ছন্দে-মূর্ছনায় ভরিয়ে দিয়েছে দর্শকের মন।
সেভাবেই মনে থাকবেন সরোজ!