পেশায় দুঁদে আইনজীবী। অপরাধ আর অপরাধীদের নিয়ে কাজ-কারবার। উদয় থেকে অস্ত পরিশ্রম করতে পারতেন। তাঁর উত্তর কলকাতার বাড়ি থেকে প্রত্যেক দিন সকালে পায়ে হেঁটে হাইকোর্টে আসতেন। তারপর শুটিং ফ্লোরে।
‘সেরিব্রাল অ্যাক্টর’ বলতে যা বোঝায় তিনি ছিলেন এক্কেবারে তাই। জটায়ু ওরফে সন্তোষ দত্ত।
শুধু কী জটাইয়ু নাকি। তিনি শুন্ডির রাজা। গান পাগল, উদার, ভাই-ভক্ত। অচেনা বিদেশি গায়েনকে আপন করে নিতে পারেন দ্বিধাহীন ভঙ্গিতে। আবার সেই তিনিই হাল্লার রাজা। কখনও শিশুর সারল্যে ছুটিকাতর হয়ে ওঠেন, আবার কখনও মন্ত্রীর বদবুদ্ধিতে যুদ্ধোন্মাদ।
পর্দায় দর্শকরা এই অভিনেতাকে দেখে আন্দাজও করে উঠতে পারেন না কীভাবে যুক্তি-তক্কের লড়াইতে কীভাবে তিনি কোর্টরুম সামলান!
ওকালতি তাঁর পেশা আর অভিনয় নেশা। কখনও একের পিঠে দুই চেপে বসে চাপ তৈরি হয়নি জটায়ুর জীবনে।
শুনানির তারিখ আর শুটিঙের শিডিউল- এই দুই নিয়ে কোনদিনই টানাপোড়েনের মধ্যে পড়তে হয়নি তাঁকে।
শুটিং ফ্লোরে সিন চলত। তারই ফাঁকে ফাঁকে পরের দিন কোর্টে মামলার সওয়াল-জবাবের চিত্রনাট্যও তৈরি করতে ফেলতে পারতেন। এতটুকু ‘স্টেপজ্যাম’ হয়নি কোথাও।
জীবনের প্রথম বড় ব্রেক পেয়েছিলেন পরশ পাথর ছবিতে। পরিচালক সত্যজিৎ রায়।
সেই শুরু। সত্যজিতের ছবিতে বারবার দেখা গিয়েছে সন্তোষ দত্তকে।
প্রখর রুদ্র সিরিজের পান-প্রবণ, টাক মাথা, ঝুমড়ো গোঁফের লেখকটিকে বড় বেশি ভালোবেসে ফেলেছিল বাঙালি। তাঁর অকাল মৃত্যুর পর ‘ফেলুদা’ সিরিজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। দ্বিতীয় জটায়ু’র খোঁজ তিনি করেননি।
সিলভার স্ক্রিনের পাশাপাশি নিয়মিত ছিলেন মঞ্চেও। ‘চলচিত্ত চঞ্চারী’ নাটকে ভবদুলালের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেই অভিনয় প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল সত্যজিৎ রায়েরও।
সেরিব্রাল অ্যাটাক আর নিউমোনিয়ার জোড়া আক্রমণে মাত্র ৬২ বছর বয়সেই ফুরিয়ে যায় আয়ুরেখার দাগ। আজকের দিনে। ৫ মার্চ। ১৯৮৮।