জীবনে তিনি একটা জিনিসই করতে পারেন। একটি জিনিসই শিখতে চেষ্টা করেছিলেন, সেটা শুধুমাত্র অভিনয়। আর কিছুই নয়।
সিমি গারেওয়ালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের সম্বন্ধে এমনটাই বলেছিলেন তিনি।
প্রথম ক্যামেরার সামনে আসা আড়াই বছর বয়সে। ক্যামেরার সঙ্গেই তাঁর আজীবনের সফর।
‘চকলেট বয়’ থেকে ‘চার্মিং লাভার বয়’ হয়ে ‘হাড় কাঁপানো মাফিয়া’ তাঁর জার্নিটা হয়েছিল এরকমই।
প্রথম ক্যামেরার সামনে আসা আড়াই বছর বয়সে। তবে সে শুধুমাত্র এক গানের দৃশ্য। প্রথম সিনেমার জগতে প্রথম আসা ‘জোকার’ ছবি দিয়ে। নীল চোখের এক টিনএজার। বাবা রাজ কাপুরের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। স্ক্রিনে উপস্থিতিও বেশিক্ষণের নয়।তবু প্রথম ছবিতেই সম্মানিত হয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কারে।
তারপর আর পর্দায় দেখা যায়নি। ফিরে এলেন তিন বছর পর। টিনএজার থেকে রোমান্টিক হিরো হয়ে। ‘ববি’ ছবি দিয়ে। সালটা ১৯৭৩। তাঁর ‘ডেবিউ’ একেবারে স্বপ্নের মতো।
নীল চোখ গোলাপী ঠোঁট তেমনি আছে তবে এ যেন অন্য ঋষি। আসমুদ্র হিমাচলের বুক তোলপাড়। কোঁচকানো চুল, বেলবটম প্যান্ট, এনার্জিতে ভরপুর সদ্য তরুণ। ভারতীয় উপমহাদেশের নতুন হার্টথ্রব। ইন্ডাস্ট্রি দেখল স্টারডমের নতুন রূপকথা। ছবির পরিচালক-প্রযোজক বাবা রাজ কাপুর। আর এক ঝড় তোলা নবাগতা ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে পর্দায় উত্তাল রোমান্স উত্তাপ ছড়ালো কত যে পাড়ায়-মহল্লায়, তার ঠিক নেই। ছবি শুধু ‘হিট’ নয়, বলা ভালো ‘হিস্টিরিয়া’।
পরবর্তী বছরগুলোতে ‘লায়লা-মজনু’, ‘সরগম’, ‘কর্জ’, ‘প্রেমরোগ’, ‘নাগিনা’, ‘বোল রাধা বোল’ একের পর এক হিট।
সোজাসাপ্টা কথার, প্রাণবন্ত চরিত্রের মানুষ। কোনওদিনই বদলায়নি সেই চরিত্র।
১৯৫২-র ৪ সেপ্টেম্বর জন্ম। বাবা হিন্দি সিনেমার সবচেয়ে বড় ‘শো-ম্যান’। দাদু ভারতীয় চলচ্চিত্রের ‘মনার্ক’। দাদারা রণধীর কাপুর। মামা প্রেমনাথ, রাজেন্দ্র নাথ। কাকারা শশী কাপুর, শামী কাপুর। তাঁর শিরায় রক্তের মতো বয়ে যেত সিনেমা। বলিউডের ‘ফার্স্ট ফ্যামিলি’র সদস্য হওয়ার জন্য প্রত্যাশ্যা পারদ খুব চোরাগোপ্তা হলেও চাপ একটা ছিলই তা অস্বীকার করেননি কোনওদিন। তিনি বলেওছিলেন, ‘ কাপুর ফ্যামিলির লোক হওয়ার জন্য মানুষ মনে করে সব সুযোগই খুব সহজে এসেছে। কিন্তু তা সব সময় কাজ করে না, নিজের চেষ্টা না থাকলে কিছুই হয় না’।
নিজের আত্মজীবনীতেও বহু ‘সহজ স্বীকারোক্তি’ আছে তাঁর। কখনও তা বলিউড স্টারডম কালচার নিয়ে, আবার কখনও ‘পুরস্কার কেনা’র বিতর্ক নিয়ে।
বিতর্কে জড়িয়েছেন একাধিকবার। কিন্তু তা এতটুকু প্রভাব ফেলতে পারেনি নীল চোখের সরল ‘লাভার বয়’ ইমেজে।