নন্দিনী! আমার খুব ভয় করে ,বড় ভয় করে! কোনও একদিন বুঝি জ্বর হবে ,দরজা দালান ভাঙ্গা জ্বর তুষার পাতের মত আগুনের ঢল নেমে এসে নিঃশব্দে দখল করে নেবে এই শরীরের শহর বন্দর। বালিশের ওয়াড়ের ঘেরাটোপ ছিঁড়ে ফেলা তুলো এখন হয়েছে মেঘ,উড়ো হাস, সাদা কবুতর। সেই ভাবে জ্বর এসে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে অন্য কোন ভূ-মন্ডলে ...
লিখেছিলেন শ্রী পূর্ণেন্দু পত্রী। লেখক। সাংবাদিক। কবি। সম্পাদক। শিল্পী। ইলাস্ট্রেটর। চিত্রপরিচালক। একটাই মানুষ। কিন্তু ভূমিকা বহুমাত্রিক। সঙ্গে আরও অনেক কিছু। গবেষণা করেছেন কলকাতার ইতিহাসের ওপর।
এক মাথা কোঁকড়া চুল আর মোটা ফ্রেমের চশমা। ওপাশে শান্ত নদীর মতো দুই চোখ। হাতে কলম কিংবা তুলি। খাতার ওপর নিমগ্ন। যেন কোন গভীর অতলে ডুব দিয়ে থাকা এক মানুষ। আত্ম বিভোর। বিস্মৃত চরাচর।
তাঁকে এভাবেই দেখতে অভ্যস্ত ছিল মহানগর।
জন্ম হাওড়া জেলার নাকোল গ্রামে। বাবা পুলীনবিহারী পত্রী। মা নির্মলা দেবী। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর চলে আসেন কলকাতায়। কিন্তু ছোটবেলায় যে মাটি ছুঁয়ে বড় হয়ে উঠেছিলেন সেই মাটির জন্য মনকেমন ছিল আজীবন। প্রান্ত বয়সে লেখা ‘আমার ছেলেবেলা’য় ছড়ার ছন্দে ঘুরে ঘুরে এসেছে কাঁচা চোখে দেখা সেই পৃথিবীর ছবি।
কেরিয়ার শুরু করেছিলেন শিল্পী হিসেবে। আর্ট কলেজের ছাত্র। দু’বছর আগে দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। কাজ করতেন ‘চিত্রিতা’ আর ‘দীপালি’ নামের দুটি পত্রিকায়। অলংকরনের কাজ। কাকা নিকুঞ্জ বিহারী পত্রীর এই কাজে তাঁর অভিভাবক। আঁকার সঙ্গে চলত লেখাও।
প্রথম কবিতার বই ‘এক মুঠো রোদ’। প্রকাশ কাল ১৯৫১। প্রথম উপন্যাস ‘দাঁড়ের ময়না’। ‘মানিক স্মৃতি’ পুরস্কার পেয়েছিল। প্রথম ছবি ‘স্ত্রীর পত্র’। শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে রজত কমল সম্মান পায়।
তুলি-কলম- ক্যামেরা সর্বত্র তাঁর স্বচ্ছন্দ যাতায়াত। কিন্তু পরিচয় ভালোবেসেছেন যেন শিল্পী হিসেবেই। তাঁর খেরোর খাতা যেন সে কথাই বলে। কথা বলে উঠে ছবি। তাঁর কবিতার মতোই। কথার ছন্দে গেরস্থালির আটপৌরে মায়াটান। সুদিন আসার অন্তহীন অপেক্ষা। ডুবে যাওয়া বিকেলের প্রান্তে বসে ভোরের আশ্বাস। আস্তিনে লুকিয়ে বুক চিনচিনে ব্যাথা।
যে টেলিফোন আসার কথা সে টেলিফোন আসেনি।
প্রতীক্ষাতে প্রতীক্ষাতে
সূর্য ডোবে রক্তপাতে
সব নিভিয়ে একলা আকাশ নিজের শূণ্য বিছানাতে।
একান্তে যার হাসির কথা হাসেনি।
যে টেলিফোন আসার কথা আসেনি।
নিভে যান এমনই এক শেষ বসন্তে। মার্চ মাস। ক্যালেন্ডারের দাগে সেদিন ১৯। সালটা ১৯৯৭। অশ্বরাহী সময়ের ঘোড়া পিছু ফিরে তাকাবার অবসর দেয়নি একবারও।