ছোটবেলায় কবিতা লিখতেন। তখন থেকেই শব্দকে ছন্দের চলনে এমন ভাবে বাঁধতে পারতেন যে বোঝা যেত না কী লিখেছেন, গান না কবিতা?
একদিন সাহস করে পাঠিয়ে দিলেন ছোটদের এক বিখ্যাত পত্রিকার অফিসে। কিছুদিন পর প্রকাশিত হল কবিতা। সঙ্গে মিলল সাম্মানিক। লেখার উৎসাহ গেল দ্বিগুণ হয়ে।
কলমে ছেলের অনায়াস গতি। প্রায় মুখে মুখে গানের কথা তৈরি হয়ে যায়।
সেই কলমেই বাংলা গান পেয়েছিল পুলকের ছোঁয়া। শব্দের গায়ে শব্দ বুনতেন। রাজবেশ গায়েই জন্ম হত গানের। সুরের মাদকতায় ঢেউ লাগত শ্রোতার মনে। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গান এমনই! হাওড়া জেলার মানুষ। বাড়ি সালকিয়ায়। জন্ম ২ মে, সন ১৯৩১। ছোট থেকেই পরিবারে সাংস্কৃতিক আবহাওয়া। কী নেই সেখানে জল-ভাত-অক্সিজেনের মতোই নাটক, গান, সাহিত্যে বড় হয়ে ওঠা।
ধুন শুনেই মুহুর্তে গান লিখে ফেলার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। সুর কানে ঢুকলেই হল, তরতরিয়ে কলম ছুটত! মান্নাদের সঙ্গে প্রায় জুড়ে গিয়েছিল তাঁর নামটা। শুধু কি মান্না দে? হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, লতা মঙ্গেশকর, আরতি মুখোপাধ্যায়, হৈমন্তী শুক্লা কে নয়! কথার ফাঁকে ফাঁকে গানের কথা তৈরি হয়ে যেত। গান শুধু কথা আর সুরের বাঁধন নয়, শ্রোতার কানে গান যেন সিনেমা হয়ে উঠত।
একবার মান্না দে আর পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ধানবাদ গিয়েছেন অনুষ্ঠান করতে। প্রোগ্রাম শেষ। হাতে কিছুটা বাড়তি সময়ও রয়ে গিয়েছে। ওই শহরেই পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক আত্মীয়া থাকতেন। ঠিক করলেন সেখান থেকে ঘুরে আসবেন। ওঁর অনুরোধে মান্না দে রাজি হলেন যেতে। ঠিকানা খুঁজতে খুঁজতে আন্দাজে এক বাড়ির দরজায় কড়া নাড়লেন। দরজা খুললেন এক মহিলা। জানা গেল তাঁরা যে বাড়ি খুঁজছেন, এ বাড়ি সেই বাড়ি নয়। আত্মীয়া থাকেন পাশের গলিতে। আসার পথে মান্না দে তাঁকে তাগাদা দিচ্ছিলেন নতুন গানের জন্য। তখনও পর্যন্ত কোনও গান তৈরি ছিল না তাঁর। সেই ভুল বাড়ির দরজা থেকে ফিরে মান্না দের দিকে তাকিয়ে বললেন, 'মান্নাদা, আপনার গান তৈরি হয়ে গিয়েছে...কাল বিকালেই দিয়ে দেব। 'ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল সেই গান।
"ও কেন এতো সুন্দরী হল
অমনি করে ফিরে তাকাল"
ভুল ঠিকানায় ভুল দরজায় সাড়া দেওয়া মহিলা অসাধারণ সুন্দরী ছিলেন। তাঁকে দেখেই এই গানের জন্ম।