‘‘পেলেম তোমার দেখা কোটি কোটি লাঙলের ভার নিয়ে হাঁটো একা একা,
তুমি বলেছিলে খালি —
দিল্লি নয়, চলো নোয়াখালি।’’
মহাত্মা গান্ধীর মৃতুতে লিখেছিলেন এই কবিতা। যাঁর টানে স্কুলছুট হয়েছিলেন মাত্র পনেরো বছর বয়সে। সন ১৯২৮। লবণ- আন্দোলনে উত্তাল দেশ। সদ্য কিশোরের মনও উথাল-পাতাল আন্দোলনের ঢেউয়ে। ঝাঁপ দিয়েছিল সে।
একবছর পর আবার ফিরে এসেছিল স্কুলের চেনা পঠে। কিন্তু শিরদাঁড়া শক্ত করে প্রতিবাদের শিক্ষাটা আজীবনের জন্য প্রবেশ করেছিল মনে। আগামীর কাস্তে কবি হয়ে ওঠা সেভাবেই। দীনেশ দাস।
যাঁর কবিতা কোনওদিনই শুধুমাত্র কবিতা হয়ে থাকেনি। হয়ে উঠেছিল স্লোগান।
‘নতুন চাঁদের বাঁকা ফালিটি
তুমি বুঝি খুব ভালোবাসতে ?
চাঁদের শতক আজ নহে তো
এ-যুগের চাঁদ হ’লো কাস্তে!’
দক্ষিণ কলকাতার চেতলায় মামাবাড়ীতে দীনেশ দাসের জন্ম। ১৯১৩ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বর। বাবার নাম হৃষিকেশ দাস। মা কাত্যায়নী দেবী। তিন ভাই ও এক বোন।
বয়ঃসন্ধির কিশোরের কাঁচা মনে দেশপ্রেমের যে বীজ বোনা হয়েগিয়েছিল তা যত দিন গিয়েছে তত মহীরুহ রূপ ধারণ করেছে। তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কড়া নাড়া। সামাজিক লোভ, লালসা, মানবিক অবক্ষয়, মন্বন্তর নাড়িয়ে দিয়েছিল প্রচলিত সুসভ্যতার আগল।
জাতি দাঙ্গা, দেশভাগ, সব মিলিয়ে বদলে গিয়েছিল চেনাদেশ, চেনা মাটি আর ভূমিপুত্র-কন্যারাও। গোটা সভ্যতাটাই যেন ভেঙে পড়ার মুখে। দেশ কালের এই প্রতিকূল পরিস্থিতি অনুঘটকের কাজ করেছিল তাঁর মনে।
১৯৩৪ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় প্রথম কবিতা। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক দর্শন প্রভাবিত করেছিল কবিতাকে। ‘কাস্তে’ কবিতা স্লোগান হয়ে ফিরত মুখে মুখে। তবে এক বছর ছাপার মুখ দেখেনি ‘কাস্তে’ । ১৯৩৮ সালে অরুণ মিত্রের সৌজন্যে ‘কাস্তে’ প্রকাশিত হয়।