অনালোকিত নরেন্দ্রনাথ

তাঁর গল্প লড়াইয়ের গল্প। মধ্যবিত্ত জীবনের সংকটে আটকে পড়া জীবন ফিরে ফিরে এসেছে। কখনও মহানগরের আরতির বয়ানে কখনও বা অন্য কেউ।
তাঁর গল্প মেয়েদের জেতায়। সমাজ সভ্যতার বড় ফাঁকটি যে সদা উপেক্ষিত থেকে যায় রোজকার বেঁচে থাকায় সেসবকেই চোখে আঙুল দিয়ে। নরেন্দ্রনাথ মিত্রের গল্প এমনই। ধাক্কা দিয়ে ভেঙে দিতে চায় মস্তিষ্কের একমুখী ভাবনার দেওয়ালগুলো।
জন্ম বাংলাদেশের ফরিদপুরে। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যেত নদী। নদীর নাম কুমার।কুমার নদীর প্রতি প্রচন্ড টান।
একান্নবর্তী পরিবারে মানুষ। সচ্ছল পরিবার। বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের মানুষের আসা-যাওয়া লেগেই থাকত। তাদের সঙ্গে মেলামেশায় আগল ছিল না।
মানুষ হয়েছিলেন বিমাতার কাছে। খুব ছোটবেলায় বাড়ির শান্তি বজায় রাখার জন্য জন্মদাতা মা নরেন্দ্রনাথকে তুলেছিলেন তাঁর বিমাতার হাতে।
দুধের শিশু বিমাতার কোল থেকে দেখেছিল মায়ের মৃতু। কী হারাল জীবন থেকে সে বোধ জাগেনি।
যখন জেনেছিলেন তখন ছটফটানিটুকুই সম্বল।
বাবা ছিলেন তাঁর কাছে ‘আদর্শপুরুষ’। ছোটবেলায় সংসারের দায়িত্ব নিতে হয়েছিল বলে প্রথামাফিক শিক্ষা খুব বেশি এগোয়নি। কিন্তু সঙ্গীত থেকে সাহিত্য সব কিছুতে তাঁর স্বাভাবিক অনুরাগ। সেই অনুরাগ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন পুত্রের মধ্যে।
শিশু নরেন্দ্রকে শেখাতেন সংস্কৃত শ্লোক। রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদের গান গেয়ে শোনতেন।
পারিবারিক সান্নিধ্য সাহিত্যিক জীবনকে প্রভাবিত করেছিল। কাছের মানুষরা ফিরে ফিরে এসেছিল লেখার লাইনে।
স্কুল জীবন পার হয়ে কলেজ জীবন। তারপরে সাহিত্যে অবগাহন। এছাড়া আর অন্য পথের কথা ভাবেননি। সমকালে সন্তরণ।
রুশ বিপ্লবের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে সমাজ বিক্ষন সবই সেই দর্শনে আবর্তিত হত।
প্রায় পাঁচশো গল্প লিখেছিলেন। ছোটগল্পের ভুবন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েও যেন অনালোকিত।

‘রস’, ‘পালঙ্ক’ ও ‘হেডমাস্টার’ গল্প চলচ্চিত্রে রূপ পেয়েছে। ‘রস’ চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে সওদাগর নামে হিন্দিতে। গল্প অনূদিত হয়েছে ফরাসি, হিন্দি, মারাঠি, রুশ, ইংরেজি, ইতালিয় ভাষায়। তবু বাংলা সাহিত্য চর্চার ধারায় তিনি যেন কিঞ্চিৎ উপেক্ষিত নায়ক। তাঁর গল্পের প্রটাগনিস্টদের মতোই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...