পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। নেশায় সাহিত্যিক। সরকারী দফতরে চাকরি করতেন। তাই আসল নামে লিখতে পারতেন না। নিতে হয়েছিল ছদ্মনাম। বাংলার পাঠক সমাজ তাঁকে প্রথম চিনতে শুরু করেছিল 'বিকর্ণ' নামে।
স্কুলের খাতায় অবশ্য তাঁর নাম ছিল 'নারায়ণদাস সান্যাল'। তিনিই নারায়ণ সান্যাল।
জন্ম ১৯২৪- এর ১৮ এপ্রিল। নদীয়ার কৃষ্ণনগরে। কিন্তু পড়াশোনা শুরু হয়েছিল কৃষ্ণনগরে। সেখান থেকে কলকাতা। কলকাতা থেকে হাওড়া। শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে ইঞ্জিয়ারিং পাশ করেন। জীবনের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল ছোটদের পত্রিকায়। পি ডব্লিউ ডি- তে চাকরি করা কালীন দন্ডকারণ্যে পোস্টিং হন। সেই দেখা উঠে এসেছিল তাঁর কলমে। দন্ডরা শবরি আর বকুলতলা পিএল ক্যাম্প উপন্যাসে। তাঁর প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস বকুলতলা পিবেল ক্যাম্প।
সাহিত্যের এমন কোনও দিক বোধহয় ছিল না যা তাঁর কলমে উঠে আসেনি। কাহিনীর সঙ্গে তথ্য সন্ধান, গবেষণা সমৃদ্ধ লেখনী তাঁর সমকালে বিরল। নারায়ণ সান্যাল তাঁর লেখার নিজস্বতায় তৈরি করে নিয়েছিলেন নিজস্ব পাঠক গোষ্ঠী।
বিজ্ঞান, শিল্প, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, সমাজ, ইতিহাস- কী নেই! শিশু, কিশোর, গোয়েন্দা, টানটান রহস্য থ্রিলার সবই তাঁর কলমের প্রিয় বিষয়।
২০০-র বেশি বই লিখেছিলেন শুধু চাকরিরত অবস্থায়। ১৯৬৯-তে রবীন্দ্র পুরস্কার পান। ২০০০ সালে বঙ্কিম পুরস্কার। তবু এই মানুষটি যেন তাঁর সমকালীন লেখকদের তুলনায় কিছুটা অন্যরকম। চিরকাল অন্তরালে থাকতে চাওয়া মানুষ। প্রচারপটু নন। সারাজীবন সেভাবেই কাটিয়েছেন। তাঁর লেখক জীবন লেখার আনন্দেই মুক্ত ধারায় বয়ে গিয়েছে। তিনি অন্তরালে থেকেছেন, কিন্তু তাঁর কলম নয়। আজও তিনি 'ইনস্টিটিশন'।