কালু, মালু, বুলু আর টুলু একই ক্লাসে পড়ে। থাকে একই রুমে। ঝাড়খন্ড সীমান্তে কাঞ্চনপুরে পাহাড়তলির এক বোর্ডিং স্কুলের ছাত্রী। একেবারে গলার বন্ধু। চার জনের নামের শেষেই ‘লু’ আছে। চার জনে চার মূর্তি। দলের পান্ডা কালু। বুদ্ধিতে তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া মুশকিল। কবিতা লেখার অভ্যাস আছে মালুর। বুলু খেলোয়াড়। আর টুলু রহস্য সিরিজের কথক।
তারা মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে কোডে কথা বলে। চারপাশের কেউ তাদের কথা বুঝতে পারে না। একমাত্র নিজেরা ছাড়া।
চার বন্ধু বেড়াতে ভালোবাসে। নানা জায়গায় তারা বেড়াতে যায়। আর নানা কান্ড ঘটে। দুষ্টু লোকদের ঠান্ডা করে চার বন্ধু মিলে। বন্ধুরা ভালোবেসে তাদের নাম দিয়েছে ‘গন্ডালু’। মানে চার জন ‘লু’।
চার কিশোরীর এমন মজার রোমাঞ্চ আর অভিযানের নেপথ্যে নলিনী দাশ।
গন্ডালুর গল্প অনেকটাই তাঁর নিজের জীবন থেকে উঠে আসা। ছোটবেলা আর হোস্টেল জীবনের গল্প। প্রথম সংকলনের দশটি গল্পে মামাতো ভাই সত্যজিৎ রায়ের আঁকা চৌত্রিশটি ছবি আছে।
নলিনী উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর নাতনি পুণ্যলতা চক্রবর্তীর মেয়ে। বাবা অরুণ নাথ চক্রবর্তী।
বড়মামা ছিলেন হাসির রাজা সুকুমার রায়। মা পুণ্যলতাও সন্দেশের পাতায় গল্প লিখতেন। নলিনীর মাসী সুখলতা রাও।
বাবা বিহার সিভিল সার্ভিসে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন।বাবার কাজের সূত্রেই হাজারিবাগ, আরা, ছাপড়া নানা সরে থাকার সুযোগ হয়েছিল।
নলিনীরা ছিলেন দুই বোন -কল্যানী আর নলিনী। ছোটবেলায় তাদের সঙ্গে তিন খুড়তুতো ভাইবোনও এক সঙ্গে থাকত।
চার ভাইবোনকে নিজে পড়াতেন পুণ্যলতা।
তাঁরা তিন বোন কলকাতায় এসে ভর্তি হন ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয়ে। একেবারে নবম শ্রেণীতে। তিনজন হোস্টেলে থাকতেন। গোয়েন্দা গন্ডালুর বীজ সেখানেই রোপন হয়।
অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন নলিনী। কলেজে ভর্তি হন দর্শন নিয়ে। বি এ পরীক্ষায় সব বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে 'ঈশান স্কলার' পেয়েছিলেন।
পরবর্তী সময়ে বেথুন কলেজের অধ্যাপক হন। পরে অধ্যক্ষ।
দীর্ঘকাল তিনি ‘ইনস্টিটিউট অফ এডুকেশন ফর উইমেন’-এর অধ্যক্ষা ছিলেন।
১৯৬২ সাল থেকে সত্যজিত রায় ও লীলা মজুমদারের সঙ্গে তিনি 'সন্দেশ' পত্রিকার সম্পাদকরূপে যোগ দেন। তাঁর উদ্যোগে তৈরি হয় 'সুকুমার সাহিত্য সমবায় সমিতি লিমিটেড' তৈরি হয়, যাঁরা 'সন্দেশ' পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব নেন। জীবনের শেষ দিন অবধি তিনি 'সন্দেশ' পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বিবাহ সূত্রে আবদ্ধ হয়েছিলেন অশোকানন্দ দাশের সঙ্গে। যিনি সম্পর্কে কবি জীবনানন্দ দাশের ভাই।
সারা জীবন বাংলা শিশু কিশোর সাহিত্যের গাছ টি যাতে সবল বৃক্ষে পরিনত হয় তার চেষ্টা করে গিয়েছেন। গোয়েন্দা কাহিনীর সঙ্গে লিখেছেন রূপকথা আর প্রবন্ধও।
তবে পুরুষ প্রধান গোয়েন্দা গল্পের দুনিয়াতে তাঁর চার কিশোরী জয় করে নিয়েছিল পাঠকদের মন মনন।