কলেজের পড়াশোনার যাবতীয় খরচ চালাতেন দাদা। কলেজে পড়তে পড়তে ছোট ভাই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লেন। রাজনীতি করতে গিয়ে প্রভাব পড়ল পড়াশোনায়। বিএসসি-তে অকৃতকার্য হলেন। সে খবর বাড়িতে অজানা থাকল না। প্রচণ্ড রেগে গেলেন দাদা। ভাইকে চিঠিতে লিখলেন, এমন ফলাফলের কারণ কী!
ভাই উত্তরে লিখলেন, ‘ সাহিত্য এবং রাজনীতি ছাড়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।পড়ার খরচ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন দাদা। ভীষণ সংকটে পড়েছিলেন ভাই। কিন্তু পথ ছাড়েননি। কলমই হয়ে উঠেছিল অনিবার্য নিয়তি।
কেন লেখেন? এই প্রশ্নের উত্তর তাঁর কাছে খুব স্পষ্ট ছিল। দ্বিধা এবং সংঘাতহীন। তিনি বলতেন, ‘লেখা ছাড়া অন্য কোনো উপায়েই যে সব কথা জানানো যায় না সেই কথাগুলো জানাবার জন্যই আমি লিখি।’
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। পিতৃ প্রদত্ত নাম প্রবোধ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য আর রাজনীতি দুইই সঙ্গী হয়েছিল আজীবনের। সাহিত্য হয়ে উঠেছিল রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধম। কোনও অভাবিত ফুল, পাখি, চাঁদ সূর্য বা প্রেমের কাব্য নয়। রোজ যে চোখে জীবন দেখতেন সেই কঠোর, কর্কশ, অসহায় জীবনের ছবি আঁকতেন লেখনীতে। ছত্রে ছত্রে বোঝাতেন মানুষের বেঁচে থাকাটাই আসলে চরম রাজনীতি।
১৯০৮ সালের ১৯ মে বিহারের সাঁওতাল পরগনার বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে জন্মগ্রহণ করেন প্রবোধচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা নীরদাসুন্দরী দেবী। চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। পিতা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদানীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্ট্রার।বন্ধুদের সঙ্গে জেদের বসে লেখা শুরু করেছিলেন। বিজ্ঞান পড়া ছেলেও সাহিত্য চর্চা করতে পারে। এবং তা সাফল্যের সঙ্গেই। রাতারাতি লিখেছিলেন ছোটগল্প ‘অতসী মামী’।
‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’ এর মত উপন্যাস, ‘ সরীসৃপ’ ‘প্রাগৈতিহাসিক’ ‘শিল্পী’র এর মত অজস্র ছোটগল্পে রিয়েলিস্টিক পথেই চলেছেন। বিশ্ব সাহিত্যের ধারাকে বাংলা সাহিত্যে উপস্থাপিত করেছিলেন।
জীবনের প্রথমভাগে তিনি ফ্রয়েডীয় মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এছাড়া মার্ক্সবাদও তাকে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছিল।
বিনিময়ে পেয়েছিলেন অপরিসীম দারিদ্র আর অনিশ্চয়তা। শেষ জীবন কাটিয়েছেন দারুণ অর্থকষ্টে। তার তীব্রতা এতটাই যে এমন সংগ্রামী মানুষটিকেও বলতে হয়েছিল, ‘দেখো, দুটি ডাল-ভাতের সংস্থান না রেখে বাংলাদেশে কেউ যেন সাহিত্য করতে না আসে।’