বৃষ্টির মধ্যে আকুল হয়ে কাঁদছে একটা দেহাতি মেয়ে। রাগ, ভয়, অসহায়তা মিলেমিশে যাচ্ছে তার কান্নায়। চোখ টেনে নেয় অভিনেত্রী। নাম স্মিতা পাতিল।
দূরদর্শনের প্রথম ফিচার ফিল্ম 'সদগতি'র দৃশ্য। পরিচালক সত্যজিৎ রায়।
১৯৬৭- তে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’ ছবি দিয়ে প্রথম লাইমলাইটে। গুজরাটে ভার্গিস কুরিয়ানের দুগ্ধ সমবায় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছবি।
মূল ধারায় ৮০ টার বেশি হিন্দি ছবি করেছেন। সামনা, নিশান্ত, জিত রে জিত, আক্রোশ, মির্চ মশালার, অর্থ-র মত অন্য ধারার সিনেমা।
আবার মিস্টার নটবরলাল, নমকহালালের মত হার্ডকোর কমার্শিয়াল সিনেমাও। 'নমক হালাল' ছবিতে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বৃষ্টির গানে স্মিতার নাচের দৃশ্য দেখে পাগল হয়ে গিয়েছিলেন ফ্যানেরা।
গ্ল্যামারসর্বস্য হিন্দি ছবির দুনিয়ায় বদলে দিয়েছিলেন ‘হিরোইন’ এর সংজ্ঞা । প্রথম থেকেই ছক ভাঙ্গা।
বিখ্যাত গ্রিক-ফরাসী পরিচালক কোস্টা গাভরাস, একবার এই ভারতীয় অভিনেত্রীর একটি রেট্রোস্পেকটিভের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। স্মিতার ভাষায়, ‘ভূমিকা’র শো শেষ হতেই মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা এগিয়ে এলেন আমার দিকে। একেবারে সোজাসুজি। কাঁধটা দুই হাত দিয়ে ধরে সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ আপনি জানেন এই গল্পটা আমার গল্প’!
১৯৭৭-এ শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় মারাঠি ছবি ‘ভূমিকা’তে প্রধান অভিনেত্রী ছিলেন স্মিতা। হংস ওয়াদেকর নামে চল্লিশের দশকের এক মঞ্চাভিনেত্রীর জীবন উঠে এসেছিল ছবিতে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক বোধ গড়ে উঠেছিল পারিবারিক সূত্রেই। বাবা-মা জয়প্রকাশ নারায়ণের ভারত দর্শন কর্মসূচীর অঙ্গ হিসেবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত পরিভ্রমণ করেছিলেন। আদ্যন্ত সোশালিস্ট ভাবনার মানুষ। তাঁদের সেই দেখা স্মিতার দৃষ্টিতেও মিশে গিয়েছিল। তাই পর্দায় ‘ মিট্টি কি অউরত’ ‘ জমিন কি আওরত’ এই ধরণের চরিত্রে স্মিতাকে পর্দার মানুষ বলে মনে হত না।
দিলীপ কুমার, সুনীল দত্ত, দেব আনন্দ , অমিতাভ বচ্চনের ‘ স্পেশাল ফেভারিট’ অভিনেত্রী স্মিতা না শাবানা, কে সেরা, সেই নিয়ে তর্ক চলত সিনেমাপ্রেমিদের মধ্যে।
প্রেমে পড়েছিলেন অভিনেতা রাজ ব্বরের। রাজ তখন বিবাহিত। দু’সন্তানের বাবা। কিন্তু বাঁধভাঙা ভালবাসায় ভেসে গেলেন। সিভিল ম্যারেজে সারলেন দু’জনে।
সব কাজের মধ্যে অসম্ভব একটা তাড়া কাজ করত। যতটা পারা যায় কাজ করে নেবার তাড়া। অদ্ভুত একটা ভয় কাজ করত তাঁর মধ্যে। সময় ফুরনোর ভয়। অনেক সময় তাঁর ভয়গুলো বাস্তবে মিলেও যেত।
তখন অমিতাভ বচ্চন বেঙ্গালুরুতে। কুলির শুটিং চলছে। বম্বেতে স্মিতা। হঠাৎ এক সকালে অমিতাভের কাছে স্মিতার ফোন। প্রচণ্ড টেনশড গলা। ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখেছেন ওঁকে নিয়ে। হেসে উড়িয়ে দিলেন অমিতাভ।
'নাথিং স্মিতা নাথিং। অ্যাম ফাইন।'
কিন্তু দুঃস্বপ্ন থেকে কিছুতেই বেরতে পারছিলেন না স্মিতা।
পরদিন সকালেই কুলির সেটে ভয়ংকর দুর্ঘটনার মুখে পড়লেন অমিতাভ। যমে-মানুষে টানাটানি। স্মিতার ঘনিষ্ঠ মানুষদের অনেকেরই এমন স্মৃতি আছে স্মিতাকে নিয়ে।
নিজের জীবন নিয়েও এমন সিক্সথ সেন্স কাজ করত।
১৯৮৬ এর ডিসেম্বরে বারবান স্টেডিয়ামে শো শেষে ভয়ঙ্কর অসুস্থ হয়ে পড়লেন ‘প্রেগন্যান্ট’ স্মিতা। তবুও কাজে বিরতি নেই।
এক সন্ধে। মিডিয়া গিজগিজ করছে বম্বের যশলোক হাসপাতালে। ফোনের ঝনঝনানি। ডাক্তার নার্সদের দৌড়াদৌড়ি। কিন্তু সব ব্যর্থ।
৩১ বছর বয়সে নিভে গেলেন স্মিতা পাতিল। নিজের ভবিষ্যৎ যেন নিজেই পড়তে পেরেছিলেন।