এমনই এক বসন্তে তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া। আসছি বলেই যেভাবে যায় মানুষ। শিমুলে-পলাশে রাঙা পথ দিয়ে। হাতের একতারাটি রেখে।ফাগুন হাওয়ায় খানিক বিষাদ ছিল সেদিন। প্রপাতহীন রোদনে বিসর্জনের ভার।
গানের মানুষরা বলে উঠেছিল এভাবে বুঝি ছাড়তে হয় হাত! যেভাবে আর ছুঁয়ে দেখা যায় না!
রবীন্দ্রসদনের ভিড় ভাঙা চত্বরে ঝরে যাওয়া ফুল। রাঙা হাসির রেশ ফুরিয়ে ঝরা পাতায় আর্তনাদ।
গানের খেলা শেষ করে ঘরে ফিরছে নগর বাউল।
তিন বছর আগে আজকের দিনে। কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য।
সহজ এক মেঠো সুরের দোতারা, হঠাৎ বাজের অভিঘাতে যেন দুম করে তার ছিঁড়ে যাওয়া।
ছিলেন নগর বাউল। গানের মানুষ। গানে গানে তাঁর মনের মানুষের সন্ধান। যেন এক অনন্ত তীর্থ যাত্রার পথ ধরে হেঁটে যাওয়া। মাঝে মাঝে নদীর সুর, মাঠের সুর, চাঁদের সুর। সুরের টানে টালমাটাল স্রোতারা। সাঁইসঙ্গে খ্যাপা জীবনের আচমন।
২০১৭- এর ৭ মার্চ। পথ যে এমন হন্তারক হয়ে উঠতে পারে আন্দাজ করতে পারেনি গায়েনের দল।
বর্ধমানে একটি গানের অনুষ্ঠান সেরে জাতীয় সড়ক ২ ধরে ফিরছিলেন কালিকা আর তাঁর ‘দোহার’।
হুগলীর গুড়াপের কাছে গাড়ি দুর্ঘটানায় পড়ে। সামনের সিটে বসেছিওলেন কালিকা। হাসপাতালের পথে মৃত্যু হয় তাঁর।
লোকগানকে তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মানুষের ভালোবাসায়। বিস্মৃতির আড়ালে তলিয়ে যাওয়া শিল্পীদের ফিরিয়ে এনেছিলেন শ্রোতাদের মাঝখানে। পথ ঘাট রাস্তা থেকে শিল্পী খুঁজে আনার অদ্ভুত দক্ষতা।
সহজিয়া জীবনের মায়ায় গানই সাধন গুরু।তবু কলের গাড়ির ড্রাইভার ভুল করে। মরমিয়া বাঁশি দিন ফুরবার আগেই সুরহারা হয়। থেমে যায় বাউলের চলন।
আসি বলে গেল বন্ধু আইলো না
যাইবার কালে সোনা বন্ধ
নয়ন তুলে চাইলো না...