মাটির গায়ক ভূপেন

গঙ্গা-পদ্মা আর মানুষ একাকার হয়েছিল তাঁর গানে। নদীর ঢেউয়ে মিশেছিল মাটির সুর। প্রাণে টানে বেজে উঠত তাঁর গান। সে টানে এক সময় ভেসে গিয়েছিল গোটা দেশ। বিদেশের মাটিও কণ্ঠের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলে উঠেছিল ‘ মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ মানুষকে দিতে পারে না?’

ভোল্গা থেকে মিসিসিপি, পদ্মা থেকে গঙ্গা সব স্রোত একাকার এক মোহনায়। নেপথ্যে অসমের এক ভূমিপুত্র। ভূপেন হাজারিকা।

সঙ্গীতশিল্পী। গীতিকার। কবি। চিত্রপরিচালক। তথ্যচিত্র নির্মাতা। সাংবাদিক। অধ্যাপক। গবেষক। পরিচয় তাঁর অনেক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিচয় একটায়- ‘মাটির গায়ক’। গান করেন মানুষের জন্য। নাগড়িক ভিড় স্নান করত মেঠো সুরের ধারায়।

প্রথম গান বেঁধেছিলেন, তখন বছর দশেকের কিশোর। দু’বছর পরেই প্লে-ব্যাক করলেন ‘ইন্দ্রমালতী’ ছবির জন্য।

গানের পাশাপাশি তুখোড় ছিলেন পড়াশোনাতেও বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল ছাত্র, মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডে শেষ করেন। থিসিস-এর বিষয় ছিল , ‘ প্রোপোসাল ফর প্রিপেয়ারিং ইণ্ডিয়া’স বেসিক এডুকেশন টু ইউজ অডিয়ো-ভিসুয়্যাল টেকনিকস ইন অ্যাডাল্ট এডুকেশন’।

নিউইয়র্কে থাকার সময় পল রবসন ভীষণভাবে প্রভাব ফেলে ছিল। দেশে ফিরে এসেই যুক্ত হয়ে পড়েন আইপিটিএ আন্দোলনের সঙ্গে। পল রবসনের গান নতুন জন্ম নিল তাঁর গান হয়ে। নতুন গানের ধারায় এদেশে তখন যে এক নতুন যুগ। তার শরীক অসমের এই ভূমিপুত্রও।

কোনও নির্দিষ্ট জগতে তিনি বেঁধে রাখেননি নিজেকে। ছবির জগতেও নিজসব ছাপ রেখেছিলেন। সঙ্গীত পরিচালনা তো বটেই, করেছেন চিত্রপরিচালনাও। যে কাজে মনের রসদ পেতেন সেখানেই উৎসাহ। কোনও বাধা-বাঁধন নেই।

অজস্র সম্মান পেয়েছিলেন জীবনে। তবু তাঁর কাছে সেরা পুরস্কার ছিল মাটির মানুষের ভালোবাসা।

নদীপ্রিয় মানুষটি মাটিকে ভালোবেসেছিলেন। মিশে গিয়েছিলেন নিজের মাটিতেই।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...