টানটান চেহারা। ঋজু ব্যক্তিত্ব। কন্দর্পকান্তি রূপ। ধুতি পাঞ্জাবি আলোয়ান হোক বা স্যুট- বুট ওয়েস্টার্ন সবেতেই চোখ ফেরানো দায়। অভিজাত কন্ঠস্বর। অনেক ভিড়েও আলাদা করে চোখ টেনে নিতেন তিনি। এই প্রবাসী বাঙালি মন ছুঁয়েছিলেন বাংলা সিনেমার দর্শকদের। নাম বসন্ত চোধুরী। আদি বাস নাগপুর। বাবা সিদ্ধেশ্বর চৌধুরী। মা কমলা চৌধুরী। পড়াশোনা নাগপুরে। কিছুটা শখেই সিনেমায় আসা। প্রথম ছবি মহাপ্রস্থানের পথে। উত্তম কুমার একবার বলেছিলেন, তাঁর মতো সৌন্দর্য আর কন্ঠস্বর পেলে সিনেমায় তিনি আরও অন্য মাত্রা যোগ করতেন। কখনও রাজা, কখনও প্রেমিক, কখনও মানসিক রোগী বসন্ত চৌধুরীর ব্যক্তিত্ব এমনই ছিল যে সবেতেই নজর কাড়তেন।তবে তাঁর সেরা কাজ শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু, দীপ জ্বেলে যাই, রাজা রামমোহন রায়। 'রাজা রামমোহন রায়' ছবির জন্য পেয়েছিলেন BFJA পুরস্কার। তিনি ছিলেন আদ্যন্ত অভিজাত ও রঙিন মানুষ। সিনেমা ছাড়াও জীবনের অন্য দিকগুলোকে খুব যত্ন করতেন। বলা যায় 'পারফেক্ট পারফেকশনিস্ট'। ইতিহাস সংগ্রহ করতেন। অভিনয়ের পাশাপাশি এও ছিল তাঁর প্যাশন। গণেশ মূর্তি, প্রাচীন মুদ্রা, পশমিনা শাল খুজঁতেন পরশ পাথরের মতো। আর ছিল বই আর বিদেশী সিনেমার নেশা।
কলকাতার শেরিফ এবং নন্দন-এর চেয়ারম্যান পদে ছিলেন। অনেকের মতে তিনিই অভিজাত বাঙালির শেষ আইকন। এসব নিয়েই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ব্যস্ত থেকেছেন। জীবনের কিছু মহার্ঘ্য সঞ্চয় দিয়ে গিয়েছেন ভারতীয় জাদুঘরে।
সমস্ত গ্ল্যামারের অন্তরালে খুব গোপনে বয়ে যেত বিষাদ। সেসব বেদনা তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত। এমনকি মারণ অসুখ কেও সেভাবেই আড়াল করে গিয়েছিলেন আজীবন। মহাপ্রস্থানের পথে সকলেই যে সঙ্গীহীন!