'চিলেকোঠার সেপাই' আখতারুজ্জামান

জ্ঞানপীঠ জয়ী অতি বিখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী তাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন "কি পশ্চিমবাংলা কি বাংলাদেশ - সবটা মেলালে তিনি শ্রেষ্ঠ লেখক।.... ইলিয়াসের পায়ের নখের তুল্য কিছু লিখতে পারলে আমি ধন্য হতাম।"

বাংলাদেশের এবং বাংলাভাষার অন্যতম কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন বলেন ...."তাঁর দুটি উপন্যাস বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস"..
তিনি... আখতারুজ্জামান ইলিয়াস... জীবনের অস্তিত্বের কথা বলা এক অনন্য সাহিত্যিক। বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক রৌদ্রজ্জ্বল প্রতিভা। তার লেখা উপন্যাস ‘খোয়াবনামা’ ও ‘চিলেকোঠার সেপাই’-কে মনে করা হয় বাংলা সাহিত্যের এপিক।

Akhtaruzzaman-Elias1

সমাজে আমরা যারা নিজেদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বলে পরিচয় দিই সেই আমাদের কাছে কিন্তু নিজের নিজের স্বার্থের চেয়ে বেশি আর কিছুই নয়। আমরা স্বীকার করি বা না করি - সমাজের স্বার্থের থেকে সবসময়ই নিজের ভালো থাকাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

যাদের কাছে শহরের স্বাচ্ছন্দ্য গ্ৰামের সরল জীবনযাত্রার থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয়... এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তা, নিজের নিজের সুখের ঘেরাটোপের মধ্যে নিশ্চিন্ত জীবনযাপন, সমাজ বা রাষ্ট্র বা অন্য মানুষ সম্পর্কে উদাসীন থাকা.. এগুলোই ছিল আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখার উপকরণ।

এই আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বাঙালির মুখোশ খুলে দিয়েছেন তিনি তাঁর রচনায়। এই খোলসযুক্ত জীবনটাকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন তিনি। কোনো রাখঢাক না রেখেই আমাদের এই মধ্যবিত্ত জীবনটাকে সোজাসুজি পাঠকের সামনে খুলে ধরবার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি।

Akhtaruzzaman-Elias2

তাঁর অন্যঘরে অন্যস্বর, খোঁয়ারি, স্বপ্নের জাল, দুধভাতে উৎপাত ইত্যাদি গল্পগ্ৰন্থের গল্পগুলিতে বারবার উঠে এসেছে এই মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত জীবনের স্বার্থপরতা, নীচতা, অপরের দুঃখ কষ্টে নিরাসক্ত থাকা, স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন ভাঙার কথা। তাঁর গল্পে কোনো রোমান্টিক ভাবালুতা নেই। আছে নির্দয় নিষ্ঠুর ভাবাবেগ শূণ্য জীবনের আলেখ্য।

কখনো হয়তো কোনো চরিত্র এই নিষ্ঠুরতার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না আবার কখনো অপরের সঙ্কটে সে সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন নির্বিকার। জীবনের হতাশা, ব্যর্থতা, বঞ্চনা, ভঙ্গুরতা, অতৃপ্তি এবং তা থেকে বেরিয়ে আসার হীন প্রচেষ্টা, অরুচিকর নোংরা কৌশল... এই সবই খোলাখুলি ভাবে উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।

খুব অল্প লিখেছেন তিনি। মোট তিরিশ বা তার কয়েকটা বেশি গল্প, পাঁচটি মোটে গল্পসংকলন, একটি প্রবন্ধসংগ্ৰহ এবং দুটি উপন্যাস - চিলেকোঠার সেপাই এবং খোয়াবনামা। এই অল্প কিছু সাহিত্য সৃষ্টি করে তিনি পেয়েছিলেন হুমায়ুন কবীর স্মৃতি পুরস্কার, বাংলা অ্যাকাডেমি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কার এবং আরো বেশ কয়েকটি।

তিনি মোটে তিপ্পান্ন বছর বেঁচে ছিলেন (১৯৪৩ - ১৯৯৭) কিন্তু এই ছোট্ট জীবনে তিনি যে অসামান্য অবদান রেখে গিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের ভুবনে তাঁর মধ্যে দিয়েই তিনি অমর হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...