হাসপাতালের বিছানায় এই ছিল তাঁর শেষ কথা। ক্ষুরধার মস্তিষ্ক আর বাঘের মতো সাহস এই দু’য়ের এক মিশেলে তৈরি মানুষটিকে দেশবাসী চিনেছিল ‘বাঘা যতীন’ নামে। পুরো নাম যতীন মুখোপাধ্যায়।
পেশাজীন শুরু করেছিলেন সরকারী চাকুরী হিসেবে। তাও যেমন-তেমন নয় একেবারে বেঙ্গল গভর্নরের ব্যক্তিগত সচীব। চাইলেই নিশ্চিন্ত জীবনের আয়েশে কাটিয়ে দিতে পারতেন ব্যক্তিগত জীবন। কিন্তু দেশের মানুষের ব্যক্তিগত কান্না আর যন্ত্রণাকে এড়াতে পারেননি। এড়াতে চাননিও।
জন্ম কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়ায়। বাবা উমেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় এবং মা শরৎশশী। খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছিলেন। মা শরৎশশী দেবী ছিলেন স্বভাবকবি। নিজস্ব চিন্তায়-চেতনার বীজ ভরে দিয়েছিলেন শিশু যতীনের মনে।
অরবিন্দ ঘোষের ডাকে হয়ে উঠেছিলেন বাংলার প্রধান বিপ্লবী সংগঠন যুগান্তর দলের অবিংসবাদী নেতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন আগে কলকাতায় জার্মান যুবরাজের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তিনি জার্মানি থেকে অস্ত্র ও রসদের প্রশিক্ষণ নেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্র বলে পরিচিত ‘জার্মান প্লট’ তারই মস্তিস্কপ্রসূত।
ছোটবেলা থেকে ডানপিটে স্বভাব। সামসামনি লড়াই করে ভোজালির কোপে বাঘ মেরেছিলেন। ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন। যমে-মানুষে টানাটানি। কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যাওয়া তাঁর স্বভাব নয় তাই ফিরে এসেছিলেন।
একদিকে সরকারী চাকরি অন্যদিকে সশস্ত্র বিপ্লবের জন্য বোমা তৈরির কারখানা দুই চলত একসঙ্গে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের নজর পড়ল সেই দিকে। বোমা কারখানার তদন্তে উঠে এল বেঙ্গল গভর্নরের ব্যক্তিগত সচীবের নাম।
তাতেও ভয় পাননি তিনি। লক্ষ্য ভ্রষ্ট হওয়ার প্রশ্নই নেই। দেশের শৃঙ্খল মুক্তির জন্য নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। জীবনের পূর্ণতা খুঁজেছেন মানুষের মুক্তিতে।
উড়িষ্যার বালেশ্বরে বুড়িবালাম নদীর তীরে এক সম্মুখসমরে গুরুতর আহত হন। লড়াইয়ের ময়দানে ক্ষত-বিক্ষত বিপ্লবীর দেহ আহত হলেও মন সূর্যের মতোই দীপ্তমান।
তাই ব্রিটিশ পুলিশ চার্লস টেগার্ট তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাঘা যতীন যদি ব্রিটিশ হতেন, তা হলে ইংরেজরা ট্রাফালগার স্কোয়্যারে নেলসনের পাশে তাঁর মূর্তি বানিয়ে দিতেন’।
প্রবল পরাক্রমী এই মানুষটির জন্ম হয়েছিল আজকের দিনে। ১৮৭৯ সন।