ন-নটা চাকরি ছেড়ে ছিলেন কেবল স্বাধীন ভাবে লিখবেন বলে। সে পথ সহজ ছিল না। মোটা মাইনে বিলাসী জীবনের হাতছানি এক কথায় ছেড়ে দেওয়া সহজ নয়। তবু তিনি পেরেছিলেন। লেখার প্রতি ভালোবাসা না বলে একে বরং নিজেকে স্বীকার করার দায় বলা যায়। ঘটনার নেপথ্যের মানুষটির নাম আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।
ধরাবাঁধা চাকরী জীবন ছেড়ে সাহিত্যিক জীবনের অনিশ্চিত সফরের জন্য কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি তাঁকে। কিন্তু বড় ভরসার জায়গা ছিল মা আর স্ত্রী। তাঁরাই পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
জন্ম ১৯২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। ঢাকা’র বজ্রযোগীনী গ্রামে। বাবা পরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মা তরুবালা দেবী। বাবা সরকারী চাকরী করতেন। সেই কারণেই উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল দেখার সুযোগ হয়েছিল। পড়াশোনও উত্তরবঙ্গেই। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন সামনে থেকে দেখার সুযোগ হয়ে গিয়েছিল সেভাবেই।
ছাপার অক্ষরে প্রথম গল্প ‘নার্স মিত্র’। প্রকাশিত হয় ‘বসুমতি’ পত্রিকায়। সেই কাহিনি নিয়েই পরে ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবিটি হয়। ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ছবির সূত্রেই গভীর বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল তাঁর সঙ্গে। আজীবন ছিল সেই বন্ধুত্ব।
বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস। হিন্দি ছবি ‘সফর’ এবং ‘বেমিসাল’ নির্মিত হয়েছিল তাঁর কাহিনীর ওপর নির্ভর করেই।
কেরাণী জীবনের চাপে লেখনীর ধার যাতে না মরে যায় তার জন্য ছেড়েছিলেন চাকরী জীবনের নিশ্চিন্তি। ঝুঁকি ছিল তলিয়ে যাওয়ার। কিন্তু জীবন তাঁকে বিমুখ করেনি। কলম চলেছে ভরা জোয়ারের স্রোতের মতো।
বিছানার ওপর জলচৌকি। সাদা কাগজের সামনে নিমগ্ন আশুতোষ। খসখস করে কলম চলছে। শব্দে শব্দে ভরে উঠছে কাগজ। সব শূন্যতা পূর্ণ। কোথাও কোন গ্লানির মেঘ নেই। সব বিষাদ শুদ্ধ সারেং সুরে রাগে বেজে ওঠে সরস্বতীর কমলে...