বাংলা ছবির জগতে তখন হাসির মহারাজদের ভিড়। ভানু বন্দোপাধ্যায়, জহর রায়, নৃপতি হালদার, রবি ঘোষ এর মত রথী-মহারথীদের ভিড়ে টালিগঞ্জের সিনেমা পাড়ায় তখন সোনালী দিন। কিন্তু তারকা ভিড়েও নজর কেড়েছিলেন এক তরুণ। থিয়েটারের চেনা মুখ। শিশির ভাদুড়ির হাতে তৈরি। তবু সিলভ্যার স্ক্রিনের অভিনয়েও সমান দড়। এক মাথা কালো-কোঁকড়া চুল আর মন ভালো করা হাসি নিয়ে রাতারাতি দখল নিয়েছিলেন দর্শকদের মনে। খাতায় কলমে নাম ছিল সত্যেন দাস। বাঙালি দর্শক তাঁকে চিনল ‘অনুপ কুমার’ নামে।
তখন সাদা-কালো পর্দা, যতক্ষণ তিনি থাকতেন চোখ সরাতে পারত না দর্শকরা। অদ্ভুত এক চুম্বকের টান। ছটফটে, সহজসরল কখনও দুষ্টুমিতে ভরা। অসম্ভব স্বাভাবিক অভিনয়ে তিনি সবসময়ই ‘পাশের বাড়ির ছেলে’।
১৯৩০ সালের ১৭ জুন কলকাতায় জন্ম। আদি বাড়ি হুগলির পান্ডুয়ায়। বাবা ধীরেন্দ্রনাথ দাস। শ্রীরঙ্গমের গায়ক ও সুরকার ছিলেন।
মাত্র বারো বছর বয়সে বাবার হাত ধরেই পা রাখেন থিয়েটারের দুনিয়ায়। কাজ শুরু করেন শিশুশিল্পী হিসেবে। মাইনে মাসে কুড়ি টাকা। অভিনয়ের হাতেখড়ি শিশিরকুমার ভাদুড়ির কাছে। পরবর্তী সময়ে শ্রীরঙ্গম,বিশ্বরূপা,কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চ, স্টার প্রায় সব মঞ্চেই তিনি দাপিয়ে অভিনয় করেছিলেন। ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত একটানা শিশির ভাদুড়ীর শ্রীরঙ্গমে ছিলেন। স্টার থিয়েটারে কুড়ি বছর অভিনয় করেছিলেন অনুপ কুমার। অনুপ কুমারকে বলা হত ‘মঞ্চনারায়ণ’।
সিনেমায় আসাও শিশুশিল্পী হিসেবেই। প্রথম ছবি ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘হালকথা’।
কী পর্দা কী মঞ্চ সব জায়গাতেই তিনি অভিনয় নিয়ে নানান এক্সপেরিমেন্ট করেছেন। ‘অভিনয়’ কোনদিন তাই ‘অভিনয়’ মনে হয়নি। চরিত্র যাই হোক না কেন তা সব সময়ই আশ্চর্য সজীব!
যাত্রার মঞ্চেও তাঁকে দেখা গিয়েছিল। চুটিয়ে কাজ করেছেন ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত। যাত্রা মঞ্চের অধীশ্বর হয়ে উঠেছিলেন অনুপ কুমার।
দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছিলেন আজীবন। শ্রদ্ধা, সম্মান, পুরস্কারও কম ছিল না। তবুও অতৃপ্তি যেন থেকেই যায়। বাংলা ছবিতে ‘আংটি চাটুজ্জের ভাই’ যেন কিছুটা অনাবিষ্কৃতই থেকে গেলেন।