“দেয়ার ওয়াজ অ্যা পেইন
হুইচ আই কনজিউম সাইলেন্টলি
লাইক অ্যা সিগারেট
দেয়ার আর সাম পোয়েম
হুইচ আই হ্যাভ সেকেন হ্যাভ লাইক অ্যাশেস
ফ্রম দ্য সিগারেট”।
উন্মাদ আগুনে পুড়তে থাকা একটা সমাজ, জ্বলছে, চিৎকার করছে, কিন্তু সেই চিৎকার শোনার মতো কেউ নেই। কারণ সবাই কোনও না কোনও ভাবে পুড়ছে বা পুড়েছে। গিলে নেওয়া চিৎকার, রা- না কাড়া যন্ত্রণা শব্দবন্ধে উঠে এল। তিনি লিখলেন,
আজ অকখাঁ ওয়ারিস শাহ নু
কিতোঁ কব্রা উইচিঁ বোল
তে আজ কিতাবে-ই-ইশক দা
কোই অগলা ওয়র্কা ফুল
ইক রোয়ি সি ধি পঞ্জাব দি
তু লিখ লিখ মারে ওয়েন
আজ লকখাঁ ধিঁয়া রোঁদিইয়াঁ
ত্যানু ওয়ারিস শাহ নু কেঁ
ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা লাশ, রক্ত রুধির চেনাব নদী, পঞ্জাবপুত্রীরা কাঁদছে। কাঁদছেন কবিও। তবে তা আগুন হয়ে উগরে দিচ্ছেন সাদা পাতায়, কাগজে- কলমে। তিনি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না, বিপদকালে ডাকছেন এক স্রষ্টাকে। তিনি ওয়ারিশ শাহ। আঠারো শতকের বিখ্যাত সুফি কবি।
তখন তাঁর কিশোরীবেলা। অসুস্থ মা। মাকে বাঁচাতে আকুল হয়ে ডেকেছিলেন ঈশ্বরকে। অকালে মাকে হারিয়ে ছিলেন । তারপর থেকে আর কখনও প্রার্থনায় দেখা যায়নি তাঁকে।
মায়ের মৃত্যুর পর গ্রাম ছাড়লেন। বাবার সঙ্গে যেতে হল এক অন্য শহরে। এক অন্য জীবন, অন্য দহন অপেক্ষা করেছিল লাহোর। মা-হারা সেই মেয়ের নাম অমৃতা কৌর ওরফে অমৃতা প্রীতম।
১৯১৯ সালের ৩১ আগস্ট, ব্রিটিশ শাসিত অবিভক্ত ভারতের পঞ্জাবে গুজরানওয়ালা গ্রামে জন্ম। বাবা করতার সিং। মা রাজ বিবি। একমাত্র সন্তান। বাবা পেশায় শিক্ষক। কবিতা লেখেন। ধর্মনিষ্ঠ মানুষ। তাঁর কাছেই লেখা শেখা।
প্রথম কবিতা সংকলন ‘অমৃত লেহরে’ (অমৃত তরঙ্গ) প্রকাশিত হল ১৯৩৬ সালে। তখন তিনি সদ্য ষোড়শী। সে বছরেই বিয়ে। মাতৃহীন কিশোরীর বিয়ে হয়ে গেল ছোটবেলার বাগদত্তা প্রীতম সিং এর সঙ্গে। অমৃতা কৌর হলেন অমৃতা প্রীতম। প্রীতম সিং পেশায় ব্যবসায়ী, নেশায় পত্রিকা সম্পাদক।
বৈবাহিক কারণে অমৃতার কলম কিন্তু থেমে যায়নি। সংসারের হাজার এক কাজের মাঝে তিনি তখন লিখে চলেছেন প্রেমের কাব্য। ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৩ পর্যন্ত ৬ টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর।
১৯৪৩ এ প্রকাশিত হল ‘লোকপীড়’। শানিত ভাষায়, কবিতার মাধ্যমে প্রতিবাদ। পঞ্জাবপুত্রীর কলমে বাংলার দুর্ভিক্ষ, হাহাকার। প্রেমের কবি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হলেন প্রতিবাদের কবিতে।
প্রগতিশীল লেখকদের আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লেন। ১৯৪৭ সাল, ভাগাভাগির মুখে দাঁড়িয়ে দেশ। অমৃতা তখন ২৮ ছুঁয়েছেন। এক জাতীয় বিপর্যয়ের সাক্ষী হলেন। ভাগ হল ভারত। লক্ষ লক্ষ মানুষ রাতারাতি ভিটেহারা। ধর্ম আর জাতির নামে নিজের মাটি থেকে উৎখাত করা হল তাদের। সবার পরিচয় ‘রিফিউজি’। ঠিকানা ‘শরনার্থী শিবির’।
অমৃতা নিজেও পাঞ্জাবী শরনার্থী লাহোর থেকে আশ্রয়ের সন্ধানে দিল্লি এলেন। চারপাশে বয়ে যাওয়া সময়ের উত্তাল তরঙ্গ আলোড়িত করল তাঁকে। ১৯৪৮- এ লিখলেন বিখ্যাত কবিতা ‘আজ অকখাঁ ওয়ারিস শাহ নু’।
তাঁর লেখায় বারবার এসেছে দেশভাগের দুঃসহ অভিজ্ঞতা। মানবতার অবক্ষয়, বিশেষ করে মেয়েদের অসহয়তার কাহিনী। ১৯৫০- এ প্রকাশিত হল তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পিঞ্জর’। দেশভাগের প্রেক্ষাপটে অসহায় নারী। অমৃতা লিখেছেন কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস। লিখেছেন আত্মজীবনী। অমৃতা নিজের জীবনে যেমন ছিলেন, ঠিক সেভাবেই ধরা দিয়েছেন 'কালা গুলাব'-এ।
অমৃতার লেখনী সময়ের দিকচিহ্নের মত। বিশ শতকের শরৎ এবং বসন্তের রূপ ধরা পড়েছিল তাঁর কলমে। সেভাবেই এসেছিল নারীর কথা। নারীর অধিকারের কথা।
অমৃতা প্রীতম নিজের জীবনে যেভাবে চেয়েছেন ঠিক সেভাবেই বেঁচেছেন। প্রেম হোক বা, প্রতিবাদ সবটাই নিজের শর্তে।
তিনি বলেছিলেন, ‘শান্তি মানে কেবলমাত্র অশান্তির অনুপস্থিতি নয়, যখন ফুল ফোটে তখনও শান্তি’। ২০০৫ সালের ৩১ অক্টোবর ঘুমের মধ্যে চিরতরে থেমে গেলেন অমৃতা। বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।