আষাঢ়ের শেষে শ্রাবনের ধারা

আষাঢ়ের কাছে এভাবে আশাহত হতে হবে, তা বোধ দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি দক্ষিণবাংলার মানুষ। ক্রমবর্ধ্মান দাবদহের পর বহু প্রতীক্ষিত স্বস্তির বর্ষা মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল পুরো আষাঢ়। একদিন পরই এসে পড়বে শ্রাবন মাস। আষাঢ়ের একেবারে শেষ লগ্নে আগত শ্রাবনের ধারাতেই শুষ্ক-উত্তপ্ত দেহ-মনে সঞ্জীবনী ফিরে পেল কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবাংলা। ভরদুপুরে আকাশ কালো করে মুষলধারায় নামল বৃষ্টি। কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায় বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে এখন কিছুটা স্বস্তিতে মানুষ।

সারা আষাঢ় জুড়ে দক্ষিণবাংলার চিত্র ‘খটখটে’ হলেও উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি কিন্তু রীতিমত সন্তোষজনক ছিল। লাগাতার ভারী বৃষ্টিপাতের জেরে জলের নিচে তলিয়ে গিয়েছে অসমের ১১টি জেলা।  উত্তর বঙ্গের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভুটানের পাহাড়ে অতিমাত্রায় বৃষ্টির দরুন ফুঁসছে তিস্তা-তোর্সা-রায়ডাক'ও। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে লখিমপুর, বিশ্বনাথ, ধেমাজি, দারাং, যোরহাট, বরপেটা, মাজুলি, নলবাড়ি, চিরাং, ডিব্রুগড় গোলাঘাটের মতো জেলাগুলো। 

 আবহাওয়াবিদদের কথায়, আষাঢ়ে সাধারণত মেঘের ঘনঘটা থাকে আকাশে। কিন্তু এবছর ব্যতিক্রম। জুলাইয়ের শুরুতে সাগরের নিম্নচাপ সেই ছবি বদলানোর কিছুটা ইঙ্গিত দিলেও বর্ষার ‘দ্বিচারিতায়’ মৌসুমি অক্ষরেখা সরে যায় হিমালয়ের পাদদেশে। ফলে অতি বৃষ্টিতে উত্তরবঙ্গ ভাসলেও কলকাতা-সহ দক্ষিণে বৃষ্টির ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর সেই কারণে অস্বস্তি আরও বাড়ছিল। গরমে হাসফাঁস দশা ছিল শহরবাসীর। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দৃশ্যটা ছিল একইরকম। কিন্তু বেলা বাড়তেই রোদ ক্রমশ কমতে থাকে। দুপুরবেলা আকাশ কালো করে মুষলধারে বৃষ্টি নামে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জায়গায়।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের পর দু’বছর আবার ঘাটতি দেখা গিয়েছিল বর্ষায়। ২০০৯ সালে তীব্র ‘এল নিনো’র দাপটে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি দেশে। তখনও দায়ী ছিল এল নিনো, অর্থাৎ প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জলতল। এ বারও দায়ী সেই ‘এল নিনো’ই। তবে অপেক্ষাকৃত দুর্বল। তাতেই ক্ষতবিক্ষত বর্ষা। ১৯৯৭ সালের পর ২০১৯ সালে ‘শুষ্কতম’ জুন দেখেছে বঙ্গবাসী। জুলাইয়েও একই চিত্র দেখা যেতে চলেছে। কারণ সোমবার অবধি কলকাতাতেই বর্ষার ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৭৭%। হাওড়ায় ঘাটতি ৭২%। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে ঘাটতির পরিমাণ ৪৯ শতাংশ। এই পরিস্থিতি গত দশ বছরে কখনও হয়নি। তিন ভাগের এক ভাগও বৃষ্টি হয়নি দেশে। ২০০৯ ও ২০১৪ সালের খরার বছরের খুব কাছাকাছি থাকবে চলতি মরসুমের  অনাবৃষ্টি।

প্রতি বছর বৃষ্টিপাতের জেরে জলস্তর ৫ থেকে ১০ ফিট বেড়ে যায়। কিন্তু  বছর এক ফিট' বাড়েনিজলস্তর। কোনও কোনও জায়গায় জলস্তর ৬ ফিটের'ও নিচে নেমেছে। এই অবস্থা জারি থাকলে এখন পর্যন্ত বৃষ্টির ঘাটতি কীভাবে মিটবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। মঙ্গলবারের বৃষ্টি শহরবাসীকে ক্ষণিক স্বস্তি দিলেও, তা কতটা স্থায়ী হবে সে বিষয়ে ধন্দে বিশেষজ্ঞরা।

 

 

 

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...