২১-এ নভেম্বর অর্থাৎ গতকাল থেকে কলকাতা শহরে শুরু হল সপ্তম বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলন ২০২৩। সেজে উঠেছে গোটা শহর। সকাল থেকেই দেশ-বিদেশের শিল্পপতি থেকে শুরু করে আমন্ত্রিত অতিথিরা আসতে শুরু করে দিয়েছিল। নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে বাণিজ্য সম্মেলনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
সম্মেলনের প্রথম দিনে সব অতিথিদের মাঝেই একাধিক বিষয়ে বিনিয়োগের ব্যাপারে কথা বললেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ আম্বানি। তিনি শেষবার এসেছিলেন ২০১৯ সালে। তারপর থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা তাঁর সংস্থা থেকে রাজ্য বিনিয়োগ হয়েছে। এবার মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি বহু কিছু ঘোষণা করলেন এবং এটাও আশ্বাস দিলেন যে আগামী তিন বছরে রাজ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে তাঁর সংস্থা।
গত মঙ্গলবার মুকেশ আম্বানি জানিয়েছেন যে তাঁর মতে বেঙ্গল হল ‘আইডিয়াল’ ইনভেস্টের জায়গা। এখন বাংলা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। গত ৪ বছরে বাংলা এখন অনেক বদলে গিয়েছে। ভারত এখন গোটা বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন যে রিলায়েন্স এখন বাংলার উন্নয়নের জন্যে অনেক কাজ করতে পারবে। ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। শিক্ষা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, কৃষি ক্ষেত্রে নানা ধরণের বিনিয়োগ করা হবে।
শুধু এই নয় এগিয়ে চলেছে ফাইভ জি পরিষেবা। এখন বাংলার প্রত্যেক বাড়িতেই দেখা যাচ্ছে এয়ার ফাইবার এবং ফাইবার পরিষেবা। এই পরিষেবা এবার কর্মক্ষেত্রে নতুন দিশারী হয়ে উঠছে।
বক্তৃতার মাঝেই জিওকে গ্রহণ করার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান গোটা বাংলার মানুষকে। প্রভুজি, বিস্কফার্মের মতো সংস্থাগুলির সাথে পার্টনারশিপ করেছিলেন রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়া বাংলায় মার্টের মতো পরিষেবার প্রচুর উন্নতি হয়েছে।
তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে জলবায়ু ভারসাম্য ঠিক রাখার জন্য এবার থেকে রিলায়েন্স দেশের সবথেকে বড় বায়ো এনার্জি পরিষেবা শুরু করেছে।
এদিন মুকেশ আম্বানি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান কারণ রিলায়েন্স ফাউন্ডেশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কালীঘাট মন্দিরকে নতুন ভাবে মেরামত করার জন্য। এখন বাংলাতে অনেক ভাল প্রযুক্তিবিদ কাজ করছে তাঁরা।
তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে বাংলার মানুষ তাঁকে বেছে নিয়েছে নেতৃত্ব দেওয়া জন্য। অটল বিহারি বাজপেয়ি ওনাকে ‘অগ্নিকন্যা’ নাম দিয়েছিলেন। এখন তিনি বাংলাকে সোনার বাংলা গড়ে সেই নামই দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান যে বিশ্ববাংলার সমস্ত হ্যান্ডলুম প্রোডাক্ট রিলায়েন্সের সব আউটলেটে পাওয়া যাবে এবং বাংলায় রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন নামে একটা ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করবে।
বাংলার জিডিপি জাতীয় স্তরে অনেকটাই বেশি। তাই নতুন বিনিয়োগের দরজা খুলে দিয়েছে বাংলা। রিলায়েন্সের কর্ণধার আরও জানিয়েছেন যে এবার রিলায়েন্স ফাইভ জি গ্রামীণ বাংলার সমস্ত এলাকায় পৌঁছে যাবে এবং ৯৮.৮% টেলিকম গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া তিনি স্পষ্ট জানিয়ে আশ্বাস দিয়েছেন যে বাংলার সমস্ত জায়গায় স্টোরের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী ২ বছরে আরও ২০০ রিটেল স্টোর খোলা হবে। এখন রয়েছে প্রায় ১ হাজার রিটেল স্টোর। আগামী ২ বছরে সংখ্যাটি প্রায় ১২০০-য় নিয়ে যেতে হবে। এই রিটেল স্টোরগুলির মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পও উপকৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে, এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সবাইকে এক চমক দেয় মঞ্চে। তিনি রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হিসাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিলেন। সূত্রে থেকে জানা গিয়েছে যে সরকারি ভাবে নিয়োগপত্র দেবেন মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। এটাও জানা গিয়েছে যে, সৌরভ এই দায়িত্ব পালনের জন্য রাজ্যের কোনও অর্থ নেবেন না। এছাড়া প্রথম বার অভিনেতা শাহরুখ খানকে রাজ্যের ‘দূত’ বানান তিনি। এ বার নিয়োগ করলেন সৌরভকে।