আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি
জনপ্রিয় গানের লাইন। এখনও ফেরে মানুষের মুখে মুখে।
তবু 'তবু' একটা থেকেই যায়। সত্যিই কি একা একা ভালো থাকা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তরে মনোবিদরা কিন্তু এক বাক্যে বলছেন 'না'। সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা বাঁচতে পারি না। তাই সঙ্গী, বন্ধু, পরিবার, পরিজনদের প্রয়োজন।
২০২০-র অতিমারী মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়েছে ' সামাজিক দূরত্ব' শব্দটিকে। এখন পৃথিবীর সব দেশেই জীবনের ওপর জাঁক দিয়ে বসেছে সেই শব্দ। একদিন জীবনের প্রয়োজনে সমাজবদ্ধ হতে শিখেছিল মানুষ। এখন অসুখ থেকে জীবন বাঁচানোর দায়ে সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে বাঁচতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষ 'সামাজিক জীব'। গোষ্ঠী বদ্ধ হওয়াই তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। তাই করোনার জেরে দিনের পর দিন ঘর বন্দি হয়ে থাকতে থাকতে ক্রমশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। সমাজে ভয়, অবসাদ বিপদজনক হারে বাড়ছে। সে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মনোবিজ্ঞানের গবেষকরা।
একটি মার্কিন জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক প্রতিবেদন জানাচ্ছে, করোনার কারণে ঘরবন্দি থাকতে থাকতে মানুষের মানসিক চরিত্র বদলে যাচ্ছে। তারা অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছে। প্রায় ১ লক্ষ মানুষের ওপর গবেষণা চালানো হয়েছিল।
দীর্ঘদিন সমাজ বিচ্ছিন্ন থাকায় ভুলছে সামাজিক আচার আচরণ। চেনা পরিসরেও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না অনেকেই।
অবসাদ আটকাতে সামাজিক মেলামেশায় জোর দিচ্ছেন গবেষকরা। হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের এক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ' দিনের পর দিন স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার কারণে মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে'। এই অবস্থা বদলাতে সামাজিক মেলামেশা বাড়ানো দরকার। সেটাই থেরাপির কাজ করবে।
মনোবিদরা বলছেন, শারীরিক ভাবে আত্মীয় বা বন্ধুদের কাছে যাওয়া যদি সম্ভব নাও হয় তাহলে ফোন বা ভিডিয়ো কলেও যেন যোগাযোগ তাকে পরস্পরের। দিনের কিছুটা সময় চেনা মানুষদের সঙ্গে মন খোলা কথায় ভালো থাকবে মন। সঙ্গে এড়ানো যাবে রোগের ঝুঁকিও। প্রিয়জনের একটা কল রাতারাতি বদলে দিতে পারে এক ঘেঁয়েমির বেঁচে থাকা।