আমরা আমাদের দেশ বা বিশ্ব সম্পর্কে সবিস্তারে জানতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানচিত্রের সাহায্য নিই। আধুনিক সময়ে মানচিত্রের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা দেখা দিয়েছে। যে কোনো দেশের অবস্থানগত বিস্তারিতই নয়, তার জলবায়ুর তারতম্য, মাটির প্রকৃতি প্রভৃতি অনেক প্রকার বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি আমরা মানচিত্রের মাধ্যমে। কিন্তু আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি, এই মানচিত্রের সম্পর্কে আমরা যেমন সবিস্তার জানতে পারি, যারা দৃষ্টিহীন বা কম দেখতে পান, তারা এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটির ব্যাপারে একেবারেই ওয়াকিবহাল নয়। এখন অনেক রকম বইপত্র এসে গেছে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ার জন্য কিন্তু মানচিত্র ছিলনা।
আঞ্চলিক ভাষায় মানচিত্র তৈরীর কাজ শুরু করেছিল ন্যাটমো অনেকদিন থেকেই। তা সম্পূর্ণ হয়েছে এবং গতকাল বাংলা ভাষায় তৈরী ব্রেইল পদ্ধতির মানচিত্রের উদ্বোধন হল কলকাতায়। পশ্চিমবঙ্গের গোটা একটা ব্রেইল মানচিত্র প্রকাশ করা হয় ১১জুন। পাশাপাশি সারা দেশের ব্রেইল মানচিত্র সম্বলিত একটি বইও প্রদর্শন করানো হয়। যে মানচিত্র এবং মানচিত্র সম্বলিত বইটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটি রাজ্যের সমস্ত দৃষ্টিশক্তিহিন্দের জন্য গঠিত স্কুলকে বিনামূল্যে বিক্রি করা হবে। একইসঙ্গে তিনটি ভাষাতে বিশেষ অডিও ক্যাসেট দেওয়া হবে স্কুলগুলিকে যাতে মানচিত্র কিভাবে বুঝতে হয়, তা ও জানানো থাকবে।
ন্যাটমোর অধিকর্তা তপতি বন্দোপাধ্যায় জানান, প্রথম আঞ্চলিক ভাষার মানচিত্র হিসেবে বাংলা ভাষায় ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরী মানচিত্র প্রকাশিত হল। এছাড়া হিন্দি, ইংরেজি, গুজরাটি এবং ওড়িয়া ভাষাতেও এই মানচিত্র তৈরী করার কাজ শুরু হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে দেশের আরও অন্যান্য অঞ্চলের ভাষাতেও এই মানচিত্র তৈরী করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। মানচিত্র প্রকাশের পর শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওই অনুষ্ঠানে আসা দৃষ্টিশক্তিহীন পড়ুয়াদের প্রায় ৬০-৭০ জন শিক্ষকরা একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নতুন এই ব্রেইল মানচিত্র কিভাবে দেখতে হয়, সেবিষয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের নথিভুক্ত স্কুলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ২২-২৩ হাজার পড়ুয়াদের দৃষ্টিশক্তি নেই বা কম বলে জানালেন রাজ্যের সমাজ কল্যাণ দফতরের বিশেষভাবে সক্ষম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনার দেবব্রত চট্টরাজ। নতুন উদ্যোগের ফলে তারা প্রচুর উপকৃত হবেন। তবে তাদের এই ব্রেইল পদ্ধতিতে কিভাবে মানচিত্র পড়তে হয় বা বুঝতে হয়, তা সঠিকভাবে জানা এবং শেখা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে রাজ্য সরকারও সব রকম সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে বলে জানিয়েছেন তিনি। ন্যাটমোকেও এবিষয়ে আরও প্রশিক্ষিত হতে হবে।
তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ব্রেইল পদ্ধতিতে মানচিত্র প্রকাশ করার ফলে সমাজের একটা বড় অংশের অবশ্যই সুবিধা হবে