বহু ছাত্রছাত্রী স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজে পড়ার পর নিজেদের কাজের জগতের ঠিকানা খুঁজে নেন আমরা জানি। সেই কলেজে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন রকম প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। বিভিন্ন বিষয়ের জন্য প্রবেশিকার ধরণ আলাদা হয়। সাধারণ বিষয়ের জন্য যেমন প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়, প্রফেশনাল পড়াশোনার জন্য সেই প্রবেশিকা পরীক্ষা একটু আলাদা রকম হয় তা আমরা সকলেই জানি। আমাদের রাজ্যে তথা সারা দেশে বহু দিন থেকেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী মানেই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কারন মধ্যমেধা বা নিম্ন মেধার ছাত্র-ছাত্রীরা এই দুটি বিষয়ে তেমন করায়ত্ত করতে পারেনা। এই দুটি বিষয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষা তাই অন্যান্য বিষয়ের থেকে একদম অন্যরকম হয়।
কিন্তু সম্প্রতি বেশ কিছুদিন হল কি ছাত্র ছাত্রীরা, কি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা তেমনভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না এই কোর্সগুলোর প্রতি। ফলস্বরূপ প্রায়ই উঠে আসছে দুর্নীতির খবর। এইরকমই একটি দুর্নীতির খবর শিরোনামে এসেছিল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ট্রান্সের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগজাম বোর্ডের বিরুদ্ধে। অভিযোগে বলা হয়েছিল, বোর্ড উত্তরপত্র দেখানোর জন্য ৫০০ টাকা পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয়। যা তথ্যের আইনের পরিপন্থী। নিয়ম অনুযায়ী ডুপ্লিকেট কপি বের করতে যা খরচ, তার বাইরে উত্তরপত্রের জন্য কোনও রকম অর্থ দাবি করা উচিত নয়। কলেজিয়াম অফ অসিস্টেন্ট হেডমাস্টার্স এন্ড অসিস্টেন্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর তরফে অভিযোগ এনে কমিশনে শুনানির আবেদন করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী ২২এপ্রিল সোমবার বোর্ডকে শুনানিতে ডেকেছিল কমিশন। যদিও সেই শুনানির পর সেই অভিযোগে ক্লিনচিট পেয়ে গিয়েছে বোর্ড। তবে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে, তথ্যের অধিকার আইন(আরটিআই) অনুযায়ী নিজেদের বিভিন্ন তথ্য তারা আপলোড করে দেবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বোর্ডের তরফে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন রেজিস্ট্রার তথা স্টেট্ পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার (এসপিআইও) দিব্যেন্দু কর। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী গত কয়েক বছর ধরে ফলপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিট (মূল্যায়ন করা) ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়া হচ্ছে। এতে কোনোরকম আর্থিক বিষয় জড়িত থাকেনা। তবে ওই শিট কতদিন সংরক্ষিত করা হবে, সেসব তথ্য আগেই প্রকাশ করা হবে। আরটিআই এক্ট ২০০৫-অনুযায়ী যে কোনও সরকারি সংস্থার ওয়েবসাইটে ১৭টি বিষয় থাকার কথা। সেই সংস্থার উদ্দেশ্য, কাজের পরিধি, ক্ষমতা, কর্মী আধিকারিকদের নাম, যোগাযোগের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর, সংস্থাটির পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার প্রভৃতি।
তবে বোর্ড যেটা এখন স্বীকার করছেনা, তা হল ওএমআর শিট ওয়েবসাইটে আপলোড করে দেওয়ার নিয়ম চালু হওয়ার আগে পর্যন্ত বেশ কয়েকবার ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার্থীদের তা দিয়ে দেওয়ার ফি হিসেবে। তথ্যের অধিকার আইন অনুযায়ী তা পেতে সময় লাগত বলে অনেক পরীক্ষার্থীই টাকা দিয়ে তা নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। সেই ব্যবস্থা যদিও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। নিজেদের ওয়েবসাইট ঢেলে সাজাবে পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড-এটাই সর্বশেষ খবর।
এ প্রসংগে আরো একটি বিষয় উল্লেখ্য, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে যাতে প্রাথমিকে কম্পিউটার শিক্ষা চালু করা যায়, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ওয়ার্ক এডুকেশনের বিকল্প বিষয় হিসেবে এটি রয়েছে। আবার মাধ্যমিক স্তরে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে যার যেমন বিষয় সেই অনুযায়ী কম্পিউটার নিতে পারে। প্রাথমিক স্তর থেকেই কম্পিউটার চালু করে ছোট থেকেই এই শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইছে সরকার।