জুতো হল মানুষের অতি প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য বস্তু। ধূলো, ময়লা থেকে পা-কে রক্ষা করার পাশাপাশি পায়ের সাজুয্য বৃদ্ধিতে জুতোর অবদান অনস্বীকার্য। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে জুতোর বিবর্তন হয়ে আসছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরণের, বিভিন্ন মানের জুতো বাজারে পাওয়া যায়। প্রাচীন কালে কাঠের তৈরী জুতোর চল ছিল। যা ‘খড়ম’ নামে পরিচিত। এটি সাধারণত ব্রাক্ষ্মণ সম্প্রদায় ব্যবহার করে থাকতেন। তাছাড়া পাটের জুতোর প্রচলনও লক্ষ্য করা যেত। তার পাশাপাশি চামড়ার তৈরী জুতোর বেশ চাহিদা ছিল। তবে এখনও কাঠ, পাট ও চামড়ার তৈরী জুতো বাজারে পাওয়া যায় যা পূর্বের তুলনায় দেখতে ভিন্ন এবং আরো উন্নতমানের। বর্ষায় ব্যবহারের জন্য প্ল্যাস্টিক ও রাবারের জুতোর ব্যবহারের জুড়ি নেই। এবার যদি বলি চিউইংগামের জুতো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। শুনে নিশ্চয়ই হকচকিয়ে উঠলেন? তবে এটাই সত্যি। চিউইংগামের তৈরী জুতো বানিয়ে ব্যবসা করছে বিদেশি কোম্পানি।
ছোটবেলা থেকেই আমরা চিউইংগামের সাথে পরিচিত। এটি খাওয়ার নিয়ম হল কিছুক্ষণ চর্বণ করে ফেলে দেওয়া। এই সকল ফেলে দেওয়া চিউইংগাম গুলি দিয়েই তৈরী করা হয়েছে বিশ্বের প্রথম ‘গাম-শু’। এই গাম-শু প্রায় ১ বছর আগে তৈরী হলেও এর উৎপাদনের উৎস অনেকেরই প্রায় অজানা। অ্যামস্টারডামের রাস্তাঘাটে প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন চিউইংগাম জাতীয় পদার্থ পড়ে থাকতে দেখা যেত। যা দেখতে গেলে পথে চলার ক্ষেত্রেও অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে টেকসই উপাদানের সৃষ্টিকর্তা ‘গামড্রপ, আই অ্যামস্টারডাম’ এবং ফ্যাশন কোম্পানি ‘এক্সপ্লিক্ট’ মিলিত ভাবে গাম-শু উৎপাদনে মনোনিবেশ করে। এই সংস্থা প্রথমে ব্যবহার করা চিউইংগাম সংগ্রহ করে। তারপর সেই ফেলে দেওয়া গাম গুলি পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তা থেকে ‘গাম-শু’ উৎপন্ন করা হয়।
সাধারণত গাম তৈরী হয় একপ্রকার সিনথেটিক রাবার থেকে। যখন এই গাম খাদ্য রূপে চর্বন করা হয় এটি ভেঙে গিয়ে একটি ভিন্ন প্রকৃতির রাবারে রূপান্তরিত হয়। এই সকল ব্যবহার করা গাম গুলি সংগ্রহ করে ‘গাম টেক’ নামক কম্পাউন্ডে প্রথমে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে গ্র্যানিউলস তৈরী করা হয়। তারপর সেই গ্র্যানিউলস জুতোর ছাঁচে ঢালা হয়। এই রকম চার জোড়া গাম-শু তৈরী করতে ২.২ পাউন্ড গাম লাগে। এই গাম-শু গুলির সোল অ্যামস্টারডামের মানচিত্রের রেখার ধাঁচে তৈরী এবং জুতো গুলিতে সুন্দর সুগন্ধির প্রয়োগ করা হয় যা আরো আকর্ষণ করে ক্রেতাদের।
গাম জাতীয় আবর্জনা সম্পর্কে সমাজকে সচেতন করার জন্যই অ্যামস্টারডামের উক্ত সংস্থার এই সিদ্ধান্ত। এই গাম-শু গুলির দাম প্রায় ২৩২ ডলার।