ঋতু পরিবর্তনের সাথে যেসব রোগ জড়িত থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো এইচ১এন১ বা চলতি কথায় যাকে বলা হয় মৌসুমী ইন্ফ্লুয়েঞ্জা| মূলত বর্ষাকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও চিকিত্সকেরা জানাচ্ছেন, যেকোনো সময়েই হানা দিতে পারে এই রোগ| সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৯ সালে রাজ্যে রেকর্ড সংখ্যক মৌসুমী ইন্ফ্লুয়েঞ্জার কেস এসেছে চিকিত্সকদের কাছে| গত ৫ বছরের তুলনায় এই বছরেই এত বেশি সংখ্যক রোগী দেখা গেছে| জানা গেছে, বাকি ৭টি রাজ্য যদিও পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে তাও রাজ্যে বাড়তে থাকা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকাকে খুব ভালো চোখে দেখছেন না কেউই|
চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন এই এইচ১এন১ ইনফেকশনের কিছু উপসর্গ হলো, গায়েহাত পায়ে ব্যথা, গলা ব্যথা, খবর গিলতে অসুবিধা, জয়েন্ট পেইন, শ্বাসের সমস্যা প্রভৃতি| এই ইন্ফ্লুয়েঞ্জা ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তির কাছে খুব সহজেই চলে যেতে পারে| তাই ইন্ফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্তকে বাড়ির বাইরে বেরোতে বা তার কাছে শিশুদের পাঠাতে বারণ করে চিকিত্সকেরা|
সম্প্রতি ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে| জানা গেছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ১০৭১টি ইন্ফ্লুয়েঞ্জার কেস এসেছে চিকিত্সকদের কাছে| ইন্ফ্লুয়েঞ্জায় মৃত রোগীর সংখ্যা ২৬ ছাড়িয়েছে বলে জানা গেছে| চিকিত্সকদের মতে, এইসব রোগের ভাইরাসের আক্রমণ মূলত বর্ষাকালে হলেও শীতের এরা নিজের মতো তান্ডব চালাতে পারে| জানা গেছে, বর্ষাকালীন রোগ সোয়াইন ফ্লু-এ প্রথম মৃত্যুটাই ঘটেছিল জানুয়ারী মাসে| সোয়াইন ফ্লু-এর মতো ইন্ফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও বর্ষাকালের আশেপাশে বিশেষ সক্রিয় থাকলেও শীতেও এদের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়| পেডিয়াট্রিক ইনফেকসাস ডিজিজ অ্যাকাডেমি (পিআইডিএ)-র চিকিত্সক জয়দীপ চৌধুরী জানান, শীতকালে মূলত দূষণের কারণেই এইসব রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ে|
শিশু যাদের শরীরে ইমিউনিটি পাওয়ার কম এবং যেসব বৃদ্ধদের ইমিউনিটি পাওয়ার কম তাদেরই ইন্ফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়| জানা গেছে, এইবছর প্রায় ২০টি ইন্ফ্লুয়েঞ্জার কেস চিকিত্সকেরা পেয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪টি তীব্র ছিল| বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রের খবর, মৌসুমী ইন্ফ্লুয়েঞ্জার কারণে যতজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাদের বেশিরভাগকেই আইসিইউ-তে শিফট করতে হয়েছিল| চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, আমাদের দেশে মোট দুইধরণের মৌসুমী ইন্ফ্লুয়েঞ্জা দেখা যায়| এক হলো এইচ১এন১ এবং অপরটি হলো সাধারণ ইন্ফ্লুয়েঞ্জা যা পরবর্তীকালে নিউমোনিয়ার আকার ধারণ করতে পারে| দুটিই ছোঁয়াচে হওয়ার কারণে চিকিত্সকরা প্রয়োজনীয় সতর্কতা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন|