বাঙালি কাঁটা প্রিয় জাতি। খোঁপার কাঁটা থেকে মাছের কাঁটা সব তার প্রিয়। এমনকি গল্প পাঠের আসরেও তার প্রিয় কাঁটা সিরিজ। বনে জঙ্গলে বেড়াতে গেলে বেঘ দেখে যতটা খুশি হয় ঠিক ততটাই খুশি হয় সজারুর কাঁটা কুড়িয়ে পেলে। সমস্যা শুধু পথের কাঁটাতে, কিন্তু সেখানেও এই জাতি জানে কাঁটার পথ পার হয়ে তবেই পৌঁছতে পারবে গুল বাগিচায়।
কাঁটা তাই কখনই বাতিল নয়। যেন সেই জন্যই বাঙালি হেঁশেল একদিন আবিষ্কার করে ফেলে ‘কাঁটা চচ্চড়ি’। বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মারীর মারে বেঁচে থাকা আদতে গরিব জাতি, তারওপর দেশভাগের আঘাত সইতে হবে তো! পাঁচ-দশ ভাইবোনের বড় পরিবার, পেট অনেক যোগান কম। হেঁশেল চালান যিনি তিনি ভেবেই আকুল। খাল বিল জলের দেশে মাছের অভাব নেই। কিন্তু যা আছে তাকেও নষ্ট করা যায় না। তাই বড় মাছের লেজা-মুড়া-কাঁটা দিয়ে রাঁধা হল কাঁটা চচ্চড়ি। অতি সাবেকি সেই রান্না আজ ভোজন রসিকের কাছে মহারাজের কদর পায়। মাংস-পোলাও-কালিয়া হার মেনে যায় গরম ভাত আর কাঁটা চচ্চড়ির কাছে! ফেলনা নই কিছুই!
কাঁটা দিয়ে রান্না তাই নাম ‘কাঁটা চচ্চড়ি’। রুই, কাতলা, ইলিশ, চিতল যে কোনও বড় মাছের কাঁটা দিয়ে রান্না হয় এই পদ। তবে জনপ্রিয় ভেটকির কাঁটা। মাছ বাজারে আলাদা করে কিনতেও পাওয়া যায়। ভেটকি মাছের ফিলে কেটে নেওয়ার পর, বাতিল অংশ হিসেবে যে বড়-লম্বা কাঁটা পড়ে থাকে কাঁটা চচ্চড়ির জন্য তা একদম আদর্শ বলা যায়।
ভেটকি মাছের কাঁটা চচ্চড়ি কীভাবে রাঁধে?
উপকরণ
ভেটকি মাছের বড় কাঁটা
নুন, হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো
পেঁয়াজ কুচি
রসুন-আদা বাটা
টম্যাটো বাটা
কাঁচালঙ্কা, জিরে গুঁড়ো,
৩/৪ কাপ গরম জল
সরষের তেল
কী ভাবে বানাবেন: ভেটকি মাছের বড় কাঁটা নুন, হলুদ, এবং লঙ্কাগুঁড়ো দিয়ে ম্যারিনেট করে আধ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তারপর তেলে সেই ম্যারিনেট করা কাঁটাগুলো ভেজে নিতে হবে। ভাল মতো ভাজা হয়ে গেলে কাঁটাগুলো পাশে রেখে ওই তেলেই পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, আদা বাটা ভাল করে কষে নিতে হবে। তার মধ্যে টম্যাটো বাটা দিলে আর জিরে গুঁড়ো দিয়ে ভাল করে নাড়াচাড়া করার পর তেল ছাড়তে শুরু করলে গরম জল দিতে হবে। মশলা ঘন হয়ে ফুটে উঠলে ভেজে রাখা মাছের কাঁটাগুলো ছেড়ে কড়াই ঢেকে দিতে হবে। বেশ অনেকক্ষণ ফুটবে। কাঁটা নরম হয়ে জল শুকিয়ে গেলে নামিয়ে নিন। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
রুই-কাতলা-চিতল মাছের কাঁটা চচ্চড়ি করলে তাতে আলু-বেগুনও দেওয়া যায়। বাকি পদ্ধতি একইরকম।