মানিকের রবি

আলপথ ধরে ছুটে যাচ্ছে অপু-দুর্গা। আবহে বাজছে মেঠো সুর। ছবিতে সংলাপ যৎসামান্য। কিন্তু আবহের সুর সব কথা বলে দেয়।

‘পথের পাঁচালী’র সম্পদ তার সঙ্গীত। আবহ সঙ্গীত। রচনা করেছিলেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর।
আনকোরা পরিচালক। প্রথম ছবি। ছবির বিষয় গ্রাম। আবহও তেমনি হওয়া চাই। সত্যজিতের কল্পনা যেন মিলে গিয়েছিল রবিশঙ্করের ভাবনায়।

রবিশঙ্কর তখন সেতারবাদক হিসেবে ধীরে ধীরে কাজ করতে শুরু করেছেন ছবিতে।
রবিশঙ্করের সঙ্গে দেখা করলেন সত্যজিৎ। আশ্চর্য! প্রথম দর্শনেই রবিশঙ্কর নবীন পরিচালককে বলেন, ছবি নিয়ে তাঁর সুর ভাবা আছে।

সেদিনই আবহ সঙ্গীতের সুর খানিকটা শুনিয়েছিলেন তাঁকে। মুগ্ধ সত্যজিৎ। কিন্তু একদিনই মাত্র সময় দিতে পারবেন। তার মধ্যেই করতে হবে ছবির সঙ্গীতের পুরো কাজটা। কিন্তু সমস্যা হল একটাই ছবির জন্য খুব বেশি সময় দিতে পারবেন না রবি। এক দিনের মধ্যেই সারতে হবে পুরো কাজটা। রাজী হয়ে গেলেন

যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হল কাজ। একই দিনে রিহার্সাল, শুটিং, এডিটিং।
পথের পাঁচালীর সঙ্গীত সিনেমা শিল্পের ইতিহাস হয়ে রয়েছে। পরবর্তী সময়ে আরও চারবার তাঁরা কাজ করেছিলেন একসঙ্গে।
সত্যজিতের ‘অপু ট্রিলজি’, অর্থাৎ ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ আর ‘পরশপাথর’৷

‘পথের পাঁচালী’ ছবির মিউজিক নিয়ে নানরকম ভাবনা ছিল সত্যজিতের। বিলায়েত খান বা আলি আকবরের মতো শিল্পীদের নিয়ে তিনি কাজ করতে চাননি। তাঁর মনে হয়েছিল, ওঁদের মতো বড় মাপের শিল্পীদের ‘ডিক্টেট’ করতে যাওয়া ওঁর পক্ষে খুব সন্তোষজনক হত না। তাতে বন্ধুত্বেও প্রভাব পড়তে পারত। বরং অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন রবি শঙ্করের সঙ্গে।
পথের পাঁচালীর সঙ্গীত অভিজ্ঞতা তিনি পরবর্তী ছবিতেও প্রয়োগ করেছিলেন। অনুপ্রেরণার কাজ করেছিল।

বন্ধু রবিশঙ্করকে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মান করতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। তৈরি করেছিলেন ভিস্যুয়াল স্ক্রিপ্টও। ১৯৫০-৫১ সালে করা সেই স্ক্রিপ্টের যথার্থ তারিখ নিয়ে অবশ্য সংশয় আছে। তবে তথ্যচিত্রের ব্যাপারে রবিশঙ্করের সঙ্গে কথা হয়েছিল সত্যজিতের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেই ছবি হয়ে ওঠেনি।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...