ছোটবেলার সত্যজিৎ

ছোট বেলায় একটা ছোট্ট ট্রাই সাইকেল ছিল। তাই নিয়ে পাল্লা দিতেন তুতো দাদা দিদিদের সঙ্গে। ছোট্ট মাণিক আর তার ছোট্ট সাইকেল। ছুটে বেড়াত।

চোর পুলিশ খেলা চলত বাড়ি জুড়ে। কখনও কখনও বাড়ি পেরিয়ে এম বাগান।
আমগাছ, পেয়ারাগাছের ডালে চড়তেও বাধা ছিল না।
বাড়ির সবার ছোট। বড় পরিবার। ভাই বোন মিলিয়ে সদা জমজমাট।
বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে ছোট। আদরের মানিক।

বাবা সুকুমার রায়। সম্ব্ধনে কারও বড়দা। কারও বড়মামা।
তিনি যখন চলে গেলেন তখন ছেলে মানিকের আড়াই বছরও পূর্ণ হয়নি।
দু-তিন বছর পরে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্সে’র ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেল। সন্দেশ পত্রিকা উঠে গেল।
উপেন্দ্রকিশোরের তৈরি গড়পার রোডের বাড়িটাও বিক্রি হয়ে গেল।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ল রায় পরিবার।

পুত্র মাণিককে নিয়ে সুকুমার জায়া সুপ্রভা দেবী চলে গেলেন ভবানীপুরে তাঁর ছোট ভাইয়ের কাছে।

RaiBari1

তারপর থেকে পরিবারের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাতের জায়গাগুলো গেল পাল্টে। কখনও পিসির বাড়ি, কখনও বা অন্য কোথায়।

ছোটবেলায় সত্যজিতের একটা ভারি প্রিয় খেলা ছিল। যখনই মেজ পিসির বাড়ি যেতেন সেটা বড়দিন, পুজো বা গরমের ছুটি, যাই হোক না কেন, ফাদার খ্রিষ্টমাসকে একদিন আসতেই হতো!

প্রতিবার তাঁর দাদা কল্যাণ সাজতেন ফাদার খ্রিষ্টমাস। সবাই জানত। ছোট্ট সত্যজিৎ-ও জানতেন।
লাল জোববা, লাল টুপি আর লম্বা পাজামা পরে, তুলোর দাড়ি-গোঁফ লাগিয়ে, পিঠে একটা মস্ত ঝোলায় অনেক খালি টিন নিয়ে আসত ফাদার ক্রিসমাস। সত্যজিতের সে কি উত্তেজনা! ঘুমে চোখ জুড়ে এলেও ঘুমাতেন না।

আর যেতেন হাজারীবাগ। তখন বছর চারেক বয়স। খুব ভালোবাসতেন ডাক্তার সাজতে। মস্ত বড় ব্যাগ হাতে নিয়ে, গলায় ‘স্টেথোস্কোপ’ ঝুলিয়ে ডাক্তারবাবু আসতেন। রোগীরা দিদি বোন ভাই। ওষুধ আর ইঞ্জেকশন দিত ডাক্তারবাবু।

দশ বছর বয়স থেকেই ছবি তুলতেন। জলরং, পেন্সিলে ছবিও আঁকতেন চমৎকার।
গড়পার বাড়ির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কাকদের কথায়, প্রেসের ঘটাং ঘট শব্দে, তারপিন তেলের গন্ধে লেগেছিল।
নিজের ছোটবেলার কথা আগলে রেখেছিলেন। সে সবই লিখে গিয়েছেন নিজের আত্মজীবনী ‘যখন ছোট ছিলাম’ বইতে।
পরবর্তী সময়ে পারিবারিক সন্দেশ পত্রিকার হল ধরে ছিলেন। যোগ্য সঙ্গী হয়েছিল তাঁর ভাই বোনরাও।
তাঁদের ছোটবেলার খেলার আসরই যেন উঠে এসেছিল সন্দেশের দফতর হয়ে।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...