হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান রূপে পরিচিত কাশী। কাশী বিশ্বনাথের শহর। স্বয়ং ভোলা মহেশ্বরের বাস এই শহরে। শিবতীর্থ তাই মন্দিরময়। এই বারাণসীতেই আছে আশ্চর্য এক মন্দির। সেই মন্দিরেও বাস মহাদেবের। এই মন্দির পরিচিত রত্নেশ্বর মহাদেবের মন্দির নামে।
প্রায় ৩০০ বছর পুরোনো এই মন্দিরটি পিসার হেলানো টাওয়ারের মতোই একপাশে প্রায় ৯ ডিগ্ৰি হেলানো। দত্তাত্রেয় ঘাটে অবস্থিত এই মন্দিরটিতে কোনও দিন পুজো হয় না। তবু দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায় এখানে। গঙ্গানদীর জল যখন বেড়ে যায় তখন জলের তলায় চলে যায় সম্পূর্ণ মন্দিরটি। বছরে প্রায় ৬ মাস জলের তলায় থাকে। তবে মন্দিরে পুজো না হওয়ার পিছনে রয়েছে সম্পূর্ণ অন্য একটি কারণ। জানা যায়, ইন্দোরের রানী অহল্যাবাঈ হোলকারের দাসী রত্না বাইয়ের ইচ্ছায় মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু রানী তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মন্দিরের নাম না দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাও দাসী মন্দিরের নাম রাখে ‘রত্নেশ্বর মন্দির’। সেই কারণে রানী রেগে গিয়ে অভিশাপ দেন। স্থানীয় বিশ্বাস রানী অহল্যাবাঈয়ের অভিশাপেই মন্দিরটা ধীরে ধীরে নদীর ঘাটের দিকে ঝুঁকে গিয়েছিল। তারপর পর থেকে মন্দিরে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। আর যারা পুজো দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাদের কোনও না কোনও ক্ষতি হয়েছে।
কিন্তু ১৮২০-১৮৩০ সালের মাঝামাঝি সময় বারাণসী টাঁকশালের মুদ্রা পরীক্ষক জেমস প্রিন্সেপ বারাণসীর একাধিক ছবি এঁকে ছিলেন। সেখানে তিনি রত্নেশ্বর মহাদেবের মন্দিরের ছবিও ছিল। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে সেই সময় রত্নেশ্বর মহাদেব মন্দিরে পুজো করা হত।
এই মন্দির নিয়ে অন্য একটি গল্পও শোনা যায়। মানুষের ধারণা প্রায় ৩০০ বছর আগে এই মন্দিরটি কেউ মাতৃঋণ শোধ করার জন্য এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু মাতৃঋণ কখনও শোধ করা যায় না, তাই মন্দিরটি একদিকে হেলে গিয়েছে। এই কারণে এই মন্দির মাতৃঋণ মন্দির নামেও পরিচিত।
অন্যদিকে ব্রিটিশদের রাজস্ব রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮৫৭ সালে আমেথির রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে কেউ এই মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন। ১৮৬০ সালে আঁকা এই মন্দিরের কিছু ছবি পাওয়া গিয়েছিল। যেখানে মন্দিরটি সোজা ছিল। ২০১৫ সালে বজ্রপাতে মন্দিরের চূড়ার কিছুটা অংশ ভেঙে গিয়েছিল। তারপর মন্দিরটির পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল। মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ১৪ মিটার। প্রতি বছর বহু দর্শনার্থী এই মন্দির দর্শনের জন্যে দত্তাত্রেয় ঘাটে আসেন।