লালচে ঘন জমে থাকা দুধের মধ্যে থেকে উঁকি দিচ্ছে ছোট গোল গোল নরম ছানার বল, মুখে দিলেই ক্ষীর আর রসের মিশেলে জিভে ছড়িয়ে পড়ছে অদ্ভুত স্বাদ। শুনে মনে হতে পারে এ বোধহয় রসমালাই। কিন্তু এক্কেবারেই না। এ হল রসমঞ্জরী। আজ এর সাথেই আপনাদের আলাপ করাব। এই রসমঞ্জরী, প্রস্তুত প্রণালীর কারণেই এক্কেবারে অনবদ্য। সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে এর জন্মবৃত্তান্ত একটু বলা যাক।
রসমঞ্জরীর আবির্ভাব হয়েছিল ১৯৪৮ সালের জুন মাসে গাইবান্ধার রমেশ ঘোষের হাত ধরে। তিনি প্রথম ওডিশার এক কারিগরকে নিয়ে শুরু করেন রসমঞ্জরী বানানো। সেই শুরু। আজ তাঁর বংশধর বাদল চন্দ্র ঘোষ দোকানের সত্ত্বাধিকারী। শুরুতে রসমঞ্জরীগুলো লম্বা আকারের বানানো হতো। তবে সময়ের সঙ্গে বদলেছে তার আকার। এখন এটি গোল করেই বানানো হয়। দোকানে গেলে আজও চোখে পড়ে প্রয়াত রমেশ ঘোষের ছবি।
শুরুটা রমেশ ঘোষের হাত ধরে হলেও গাইবান্ধায় কমবেশি প্রায় সব মিষ্টির দোকানেই রসমঞ্জরী পাওয়া যায়। যাইহোক, এবার আসি রসমঞ্জরীর রসালো রহস্যময়ী স্বাদের ব্যাখ্যায়। রসমঞ্জরীর বড় অংশ জুড়ে থাকে দুধ ও ছানা। প্রাথমিকভাবে দুধ ঘন করে বানানো হয় ক্ষীর। এরপর ছানা আর সামান্য ময়দা সহযোগে মেশিনের সাহায্যে তৈরি হয় নরম বলগুলো। এরপর সেগুলোকে চিনির রসে সেদ্ধ করে খানিক ঠান্ডা করে সেই রসস্নাত বলগুলো মেশানো হয় ক্ষীরে, ব্যস, তৈরী রসনার পরিতৃপ্তি নিবারক রসমঞ্জরী। খুব গরম না পড়লে ১২ থেকে ১৪ঘণ্টা রসমঞ্জরী ভালো থাকে। চাহিদার কারণেই দিনে আনুমানিক ১০০ থেকে ১৫০ কেজি রসমঞ্জরী বানানো হয় এই দোকানে।
রমেশ ঘোষের দোকান পথিকৃৎ হলেও রসমঞ্জরী বিক্রিতে খ্যাতি অর্জন করেছে গাইবান্ধা মিষ্টান্ন ভান্ডার। গাইবান্ধার বাইরেও এই রসমঞ্জরীর অবাধ যাতায়াত। বলা যায়, গাইবান্ধার প্রায় সব বাড়ীতে ঢুঁ মারলেই দেখা মিলবে তাদের প্রতিদিনের জীবনের অনুষঙ্গ - রসমঞ্জরীর। দেখবেন নাকি চেখে!! খুব সহজেই আপনিও এই স্বাদের ভাগীদার হতে পারেন বাড়ী বসেই, কারণ ঠান্ডা করে বাংলাদেশের বাইরেও পাঠানোর ব্যবস্থা আছে। শুধু দরকার একটা ক্লিকের আর তারপর আপনার সাথে সাক্ষাৎ হবে তার, পাবেন সেই অবর্ণনীয় স্বাদ।