মানুষ মরণশীল।তাই জীবনের পর মৃত্যু আসবে সেটাই স্বাভাবিক। আর মৃত্যু মানেই তার স্মৃতিটুকু ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছুই থাকে না তার প্রিয়জনদের কাছে। তার ব্যবহার করা কিছু সামগ্রী ছাড়া সাথে থাকে না আর কিছুই। মৃতদেহ দাহ করার পর সেই দেহের ছাইভস্ম নদীতে ভাসিয়ে দেওয়াই রীতি। কিন্তু সেই ছাই নদীতে ভাসিয়ে না দিয়ে যদি তা কিছু এমন কিছু বানানো যেত যা সারাজীবনের জন্য প্রিয়জনের স্মৃতি হয়ে সাথে থেকে যেত তাহলে কেমন হতো? সম্প্রতি জানা গেছে, সুইজারল্যান্ডের একটি কোম্পানি এরকমই মৃতদেহের ভস্ম দিয়ে বানাচ্ছে এক নতুন ধরণের হীরে|শুনেই অবাক লাগছে। কি তাই তো? হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। মৃতের দেহাবশেষ থেকেই অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরী হচ্ছে হীরে।
সুইজারল্যান্ডের কোম্পানিটি মৃতের দেহাবশেষ থেকে ইতিমধ্যেই বানিয়ে ফেলেছে ০.২৫ থেকে ১.০ ক্যারেটের হীরে| কোম্পানির পক্ষ থেকে এই হীরের নামকরণ করা হয়েছে, 'এ জুয়েল টু রিমেম্বার'। প্রিয়জনের মৃত্যুর পর তার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এর থেকে ভালো পন্থা আর কিছু হতে পারেনা বলেই জানিয়েছে সেই কোম্পানি। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হীরের সবচেয়ে ভালো জিনিস হলো, এটি একজন ব্যক্তির সম্পূর্ণ বডি কম্পোজিশন দিয়ে তৈরী। জানা গেছে, খনি থেকে প্রাপ্ত হীরের সাথে বেশ পার্থক্য রয়েছে এই হীরের। এই হীরে সবক্ষেত্রে ক্রিস্টাল ক্লিয়ার নাও হতে পারে।শরীরের নানা রাসায়নিকের উপর নির্ভর করেই এই হীরের রং পর্যন্ত তৈরী হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই হীরে তৈরির সময় মোটেই বোঝা যায় না শেষপর্ন্ত কোন রঙের হীরে তৈরী হতে চলেছে।হতে পারে আপনার প্রিয়জনের দেহের ছাই থেকে তৈরী হীরের রং হলো গোলাপি কিংবা কালো।
জানা গেছে, পরীক্ষাগারে এই হীরে তৈরী হলেও এই হীরে তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে না কোনো রাসায়নিক সংযোজক কিংবা রাসায়নিক মিশ্রণ। এই হীরে থেকে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও প্রায় নেই বললেই চলে। কোম্পানির তরফ থেকে বলা হয়েছে, খনি থেকে যে হীরে খনন করে আনা হয় তা মূলত মৃত ডাইনোসরের কিংবা কোনো গাছ থেকে তৈরী কিন্তু তার জায়গায় যদি নিজের কাছের মানুষের দেহের চিহ্ন এইভাবে সংরক্ষণ করে যায় তাতে ক্ষতি কিসের?
কোম্পানির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, যে তিন ধরণের পদ্ধতিতে হীরে তৈরী হয়ে থাকে তা হলো, সিনথেটিক, ম্যান মেড এবং পরীক্ষাগারে তৈরী হীরে| যদিও ম্যান মেড হীরে নামটি নিয়ে যথেষ্ট কনফিউশন রয়েছে কারণ পরীক্ষাগারে তৈরী হীরেও মানুষ দ্বারাই নির্মিত। 'দি জেমোলজিকাল ইনস্টিটিউট অফ আমেরিকা'র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরীক্ষাগারে তৈরী হীরেই প্রকৃত হীরে কারণ এতে পিওর কার্বন কম্পোজিশন বর্তমান।ইন্টারেস্টিং লাগছে তো? কোম্পানির পক্ষ থেকে এক একটি হীরের দাম ধার্য করা হয়েছে মাত্র ৫ হাজার ডলার থেকে শুরু করে ২০ হাজার ডলার।