অনেকদিন ধরেই মাতৃগর্ভে তার উপস্থিতির প্রমান সে দিচ্ছিলো তার মাকে। কিন্তু মেডিক্যাল প্রমাণের অভাবে তার উপস্থিতি অন্ধকারেই থেকে গেছিলো। বারবার আলট্রা সোনোগ্রাফি করার পরেও খোঁজ পাওয়া যায় না তার।
গত বৃহস্পতিবার পেটে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন বছর পঁচিশের প্রতিমা বাগ। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা আগের সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখার পরে আবারো নতুন করে সোনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন। তাতেও কিছু ধরা পড়ে না। অবশেষে 'প্রেগন্যান্সি টেস্ট' করানোয় প্রমান মেলে তার অস্তিত্বের।খোঁজ শুরু হয় তখন থেকেই। কারণ মাতৃগর্ভে যে তার উপস্থিতির কোনো প্রমানই নেই। তাহলে কোথায় সে? চলতে থাকে গর্ভস্থ শিশু এবং চিকিৎসকের মধ্যে লুকোচুরি খেলা।
অনেক পরীক্ষানিরীক্ষার পরেও তার খোঁজ না মেলায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় থ্রিডি স্ক্যান করার। শুক্রবারেই এই স্ক্যান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নন কন্ট্রাস্ট সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে অবশেষে দেখা যায় সেই গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান। দেখা যায়, পাকস্থলী, যকৃৎ এবং অন্ত্রের মধ্যে অদ্ভুত অবস্থায় বেড়ে উঠছে সেই সন্তান। স্ক্যানের ফলে দেখা যায়, শিশুটি ইতিমধ্যেই গর্ভে তার পাঁচমাস পূরণ করে ফেলেছে। স্বাভাবিকভাবেই সম্পূর্ণ শরীর গঠন হয়ে গেছে। দেখা যায়, শিশুটির মাথা, হাত পা সবই খুব ভালোভাবে গঠিত হয়েছে। তারপরেই তার নামকরণ করা হয় 'ওয়ান্ডার বেবি'। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানায়, সেই গর্ভস্থ সন্তান তার মায়ের পাকস্থলী যকৃৎ প্রভৃতি অন্ত্রের দেওয়াল থেকে খাবার সংগ্রহ করছিলো। তাদের মত, এইভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পরে সে যেভাবে খাবার সংগ্রহ করতো তাতে মায়ের শরীরে রক্তক্ষরণ হওয়ার হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তাতে মাকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যেত। এই ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে শিশুটিকে বাদ দেওয়া ছাড়া মাকে বাঁচানোর কোনো উপায় ছিল না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এরকম ঘটনা অত্যন্ত বিরল বলেই মনে করছেন চিকিৎসকগণ।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতিমাদেবী যখন হাসপাতালে ভর্তি হন তখন তাঁর রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল ৭। তাই শুক্রবার ও শনিবার তাকে দুই ইউনিট রক্ত দেওয়া হয়। অবশেষে শনিবার তার অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকেরা জানান, এই ধরণের প্রেগন্যান্সিকে বলা হয় 'অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি'। এই ক্ষেত্রে শিশু মাতৃ জঠরেই বেড়ে ওঠে কিন্তু তার স্থান হয় না জরায়ুতে। তার বদলে সে বেড়ে উঠতে পারে যেকোনো অন্ত্রের মধ্যবর্তী স্থানে। এই মুহূর্তে চিকিৎসকেরা এই বিরল ঘটনাটি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন। তারা এই মুহূর্তে জানার চেষ্টা করছেন প্রতিমাদেবীর প্রেগন্যান্সিটি 'প্রাইমারি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি' নাকি 'সেকেন্ডারি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি'। যদি এটি প্রাইমারি অ্যাবডোমিনাল প্রেগন্যান্সি হয়ে থাকে তাহলে এই ঘটনাটি পৃথিবীর ২৬টি ঘটনার মধ্যে একটি হয়ে ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে থাকবে। কিন্তু সন্তান হারিয়ে কেমন আছেন সেই মা? চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, আপাতত সুস্থই আছেন প্রতিমাদেবী।