অল্পের দেখাও যখন চিরকালের নামান্তর, রাফায়েল

কখনও অল্পের দেখাও হয়ে ওঠে কোনও বড় ঘটনার সাক্ষ্য। এই অভিজ্ঞতা এক জীবনের নাম। একবার এক গ্রামের মধ্যে দিয়ে হাঁটছিলেন চিত্রকর। এমন সময়ে চোখে এলো এক চাষি স্ত্রী, কোলে তাঁর প্রাণ ফল। আঁচল ধরে টেনে চলেছে মা কে।

এই মাতৃমূর্তি ১৫১২ সালে ‘সিস্টাইন ম্যাডোনা’ নামে ক্যানভাসে অমর হয়েছে।মাত্র সাঁয়ত্রিশ বছরের জীবন। শিল্পীর জীবনের তার এত অল্প সময়ের সুরে বাঁধা! তবুও তাঁর বুননে হার মেনেছে বয়সের ঘেরাটোপ। মৃত্যুর উল্লাস সেখানে ফিকে হয়ে ক্যানভাসের রঙে মিশেছে।

ক্ষণজন্মা হয়েও যোগ্যতার বলে ইতিহাসে অনন্য তিনি। তাঁর জন্ম শহর উরবিনো, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। রাফায়েল। রাফায়েলো সানচিয়ো ডা. উরবিনো। ক্ষণস্থায়ী প্রতিভার চিরস্থায়ী অলঙ্কার। আবির্ভাবেই মূর্ত করে তুলেছিলেন কল্পনার ম্যাডোনা কে। সিস্টাইন ম্যাডোনা নামের মা মেরী সর্বাধিক আলোচিত। বর্তমানে জার্মানির ড্রেসডেন শহরের কেন্দ্রীয় জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে।

raphel1

এই গৌরব কেও ম্লান করে উজ্জ্বল হয়েছে স্কুল অফ এথেন্স। ইতালিয়ানে ‘ ইস্কোয়ালা ডি এতেনে । ' রেঁনেসার অন্যতম নিদর্শন। ৭৭০ সেন্টিমিটার চিত্রে বিশাল গম্বুজবিশিষ্ট একটি হলঘর। ফিগারগুলোকে মাঝ বরাবর সরলভাবে সাজানো। আদপেই স্কুল নয়। বরং একটি প্লাটফর্ম, যেখানে প্রাচীনকালের বিখ্যাত দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, কবি একসঙ্গে উপস্থিত হয়েছেন।

ছবিটির মাঝে প্লেটো এবং তাঁর শিষ্য এরিস্টটল। প্লেটোর পরনের পোশাক যে রঙ তার অর্থ বাতাস ও আগুন। দুটোই ভরহীন বস্তু। তাঁর ভাববাদিতার উদাহরণ।অন্যদিকে বস্তুবাদী দার্শনিক এরিস্টটলের পোশাকের রঙ মাটি আর জলের রূপক। পৃথিবীর ভরের সিংহভাগ। প্লেটোর শরীরের রঙে আধ্যাত্মিকতা, ধর্মবিশ্বাস, আত্মার অমরত্ব, প্রকাশ পেয়েছে একে একে।

raphel2

একদিকে প্লেটো উপরের দিকে আঙুলের ইশারা করছেন, অপরদিকে বাস্তববাদী এরিস্টটল নিচের দিকে ইশারা করছেন। ভাববাদী দার্শনিক ও বস্তুবাদী দার্শনিকের মধ্যে এক ফ্রেমের পার্থক্য এভাবেই অমর হয়ে উঠেছে। এরিস্টেটল আর প্লেটোর পাশাপাশি রয়েছেন অন্যান্য অনেক স্বর্ণদেহীরা।

প্রেক্ষাপটে পিটার্সের অসমাপ্ত প্যাসিলিকা। সিঁড়িতে বসে আছেন সক্রেটিস। ভাবলেশহীন। বাঁ দিকে ওপরে মিউজিক লাইট, দেবতা এ্যাপোলো। ডানদিকে দেবী এথেনা। সামনের অংশে হেরোক্লিটাস। চিন্তায় নিমগ্ন। গভীর মননে রহস্য ঘিরে নেয়।

ষোলো থেকে সতেরোর মাঝেই সৃষ্টি সত্তা রঙের জন্য ব্যাকুল হয়েছেন। আসলে সময় যে কম! রোমের বহু বিখ্যাত ভবনের দেয়ালচিত্রে নিজের নাম লিখলেন। সবচেয়ে বিখ্যাত দেয়ালচিত্র ‘দ্য ফায়ার ইন বোর্গো’। শক্তিশালী কম্পোজিশন, সহজ, স্বাভাবিক ও কমনীয় ফিগার। চিনিয়েছিলেন ধর্মেও কাব্যের বাস।শুভ জন্মদিন আধুনিক লিওনার্দো।

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...