প্রায় ১৪০ কোটি ভারতীয়দের চোখ এখন শুধুমাত্র অযোধ্যার দিকেই। কেন সেটা বুঝতেই পারছেন? আর ৪দিন পরেই উদ্বোধন হবে অযোধ্যার রাম মন্দির।
আমরা সকলেই জানি যে শ্রী রামের জন্মভূমি হচ্ছে অযোধ্যা। পূর্বে সেই এলাকার নাম ছিল ‘সাকেত’। এবার সেই অযোধ্যার পূণ্যভূমিতেই প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে রাম লালার। এই মন্দিরের নির্মাণের শুরু থেকেই ভক্তদের আগ্রহ ছিল একেবারে তুঙ্গে। এবার সেই অপেক্ষা, উত্তেজনার অবসান হতে চলেছে। রাম মন্দির উদ্বোধন হতে আর মাত্র ৪ দিন বাকি!
অযোধ্যার রাম জন্মভূমি কমপ্লেক্সে এল রামলালার স্থাপত্য মূর্তি। এবার ১৮ই জানুয়ারি, অর্থাৎ আজই গর্ভগৃহে হবেন বিরাজমান। জানা গিয়েছে যে ২৪ বিধিতে হবে এই পুজো। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অযোধ্যায় আসছেন পুণ্যার্থীরা এবং আজ রামলালার বাল্যকালের মূর্তি নিয়ে অযোধ্যায় বের করা হবে শোভাযাত্রা।
রামলালাকে দেখার ইচ্ছে রয়েছে প্রতিটি ভক্তের মনে। জানা যাচ্ছে, ভগবান রামলালার রূপটি পদ্মফুলের উপর খেলা করা পাঁচ বছরের বালকের মতো। তার শরীরের দিব্যজ্যোতিতে চারদিক উদ্ভাসিত। মুখে স্মিত হাসি। এক হাতে তির, অন্য হাতে ধনুক। বালকের শান্ত মুখমণ্ডলের দিকে চাইলে মন শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসবে সকলের। ইনিই রামলালা। শিল্পী অরুণ যোগীরাজের হাতে তৈরি এই মূর্তিটি প্রায় ৫১ ইঞ্চি লম্বা।
তবে, রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে ২২ জানুয়ারি। ভগবান শ্রী রামলালার মূর্তির শুভ প্রাণ প্রতিষ্ঠা যোগ পৌষ শুক্লা কূর্ম দ্বাদশী, বিক্রম সংবত ২০৮০, অর্থাৎ সোমবার, ২২ জানুয়ারি৷ সেদিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্বোধন করবেন এই রাম মন্দির।
এই রামমন্দির নির্মাণের সূচনা উপলক্ষে ভারতের প্রতিটি অংশের রাম মন্দির থেকে পবিত্র মাটি ও জল অযোধ্যায় আনা হয়েছে আর তা মন্দির নির্মাণে কাজে লাগানো হয়েছে। এছাড়া রামলালার মন্দিরের দরজা এবং থামগুলিতে থাকবে সোনার প্রলেপ।
তবে এখনও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে ভক্ত মহলের উন্মাদনা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। ভগবানের জন্য দেশের সব থেকে বড় প্রদীপ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার পনিহাটী সনাতন মঞ্চ। জানা গিয়েছে এই প্রদীপটি ১৪ ফুট লম্বার পাশাপাশি উচ্চতা সাড়ে ৪ ফুট এবং ডায়ামিটার সাড়ে ৯ ফুট। মাটির প্রদীপটির ওজন ২০০ কেজি। কমপক্ষে ৫০০ লিটার তেল দিয়ে প্রদীপটা জ্বালাতে হবে। ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের দিন প্রজ্জ্বলন করা হবে দীর্ঘাকায় এই প্রদীপ।
রাম মন্দির উদ্বোধনের জন্য অযোধ্যায় গুজরাট থেকে আনা হয়েছে ১০৮ ফুট লম্বা ধূপকাঠি। এসেছে ৫৬ রকমের পেড়া। এছাড়া রামলালার ভোগের জন্য আসছে ১,২৬৫ কেজি ওজনের লাড্ডুও।
উদ্বোধন-পর্বের এক সপ্তাহ আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে পূজার্চনা ও বিধি পালন। শ্রী রামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে যে সরযূ নদীর তীরে 'দশবিধ' স্নান, বিষ্ণু পুজো এবং গোমাতার উদ্দেশে নৈবেদ্য প্রদান করা হবে। এছাড়া মঙ্গল কলসে করে সরযূর জল মন্দিরে নিয়ে আসেন ভক্তরা। জানা গিয়েছে যে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে এরকম নানান আচার-অনুষ্ঠান।
ইতিমধ্যেই ভক্তরা শুরু করে দিয়েছেন অযোধ্যা যাত্রা। কেউ গেরুয়া ঝান্ডা নিয়ে কিংবা কেউ রামের নামে স্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছেন অযোধ্যায়। সবার মুখেই শোনা যাচ্ছে ‘জয় শ্রী রাম’।
২২ জানুয়ারি হবে রামমন্দির উদ্বোধন। এদিনের অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বরা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, শচীন তেণ্ডুলকর, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি প্রমুখ। থাকবেন বিজ্ঞানী, সমাজকর্মী থেকে শুরু করে সাধু সন্তরাও। সর্বমোট আমন্ত্রিতের সংখ্যা ৭ হাজার জনেরও বেশি।