বেঙ্গালুরু শহরের কুলি থেকে কীভাবে হলেন ফ্যানেদের ‘থালাইভা’ ব্র্যান্ড রজনীকান্ত

তাঁর নামে ফ্যান ক্লাবের সংখ্যা শুনলে চমকে যেতে হয়! ১ লক্ষ ৫০ হাজার!

 

তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ঝকঝকে নিউজার্সি সব জায়গায় তাঁর ফ্যান। ‘সুপারস্টার’, ‘মেগাস্টার’ সব শব্দ ফিকে হয়ে যায় তাঁকে ঘিরে তৈরি হওয়া উন্মাদনার কাছে। লার্জার দ্যান লাইফ। ফ্যানেদের কাছে তিনি ‘ভগবান’।‘রজনীকান্ত সব পারেন’। প্রবাদ হয়ে গিয়েছেন ‘থালাইভা’!

rajanikanta-1

আসলে সত্যি সত্যিই তিনি সব পারেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে দেওয়ালটা যে ভেঙে দিতে হয়, তিনি জলজ্যান্ত উদাহরণ। আসল নাম শিবাজীরাও গায়কোয়াড়। জন্ম কর্ণাটকে। তাঁর পরিবার মারাঠি। বেঙ্গালুরু শহরে কুলি হিসেবে শুরু করেছিলেন জীবন। তারপর কাঠ মিস্ত্রির ভূমিকায়। কখনও বা বাসের কনডাক্টর। ভাগ্য বদল করতে পেশা বদল ঘটেছে বারবার। অভিনয়ের প্রতি টান ছিল। মাদ্রাজ ফিল্ম ইন্সটিটিউটে ভর্তি হলেন হাতে কলমে অভিনয় শিখতে। কন্নড় আর মারাঠি ভাষা জানতেন, শিখে নিলেন তামিলও।

rajanni-2

অভিনয়ের সিদ্ধান্তে বাড়ি থেকে বাধা এল প্রবল, কিন্তু তিনি অনড়। পাশে আর কাউকে না পেলেও তাঁর লড়াইয়ে সঙ্গী হল এক বন্ধু। নাম রাজ বাহাদুর। মঞ্চ অভিনয় শুরু করলেন। সেভাবেই একদিন চোখে পড়ে গেলেন তামিল পরিচালক কে বালাচন্দরের। ১৯৭৫-এ অনস্ক্রিন ডেবিউ হল। ছবির নাম ‘অপূর্ভা রাঙ্গাল’। তার পরের জার্নিটা কঠিন, কঠোর কিন্তু রূপকথার। পায়ের তলার জমি তৈরি করেছিলেন রক্ত, ঘাম, শ্রম দিয়ে। কুলি থেকে তামিল ছবির ভগবান হয়ে উঠতে ঠিক কী কী করতে হয়েছিল তাঁকে?

রজনীকান্তের অস্ত্র ছিল তাঁর ম্যানারিজম। কিন্তু শুধু ম্যানারিজম আর অভিনয় দিয়ে ‘স্টার’, ‘সুপারস্টার হওয়া গেলেও মানুষের হৃদয়ে ভগবান হয়ে ওঠা যায় না। রোমান্টিক ছবি দিয়ে রজনীকান্তের কেরিয়ার শুরু হয়নি, বরং ঘটেছিল ঠিক উল্টোটা। 

rajanni-5

অভিনয় জীবনের প্রথম দু’বছর শুধু খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে যেতে হয়েছিল। কখনও অত্যাচারী স্বামী, ধর্ষক কী নয়! ১৯৭৭-এ প্রথম অফার আসে ‘পজেটিভ’ চরিত্রে অভিনয়ের। ‘ভূবন অরু কেল্ভিক্কুর’। সেই ছবি আজ জায়গা করে নিয়েছে সর্বকালের সেরা দক্ষিণী ছবির লিস্টে।

যত সময় এগিয়েছে তত নানা ধরনের চরিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এমনকি রোবটের ভূমিকাতেও। মানুষ আর নিজের দর্শকদের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি, সহমর্মিতা তাঁকে মানুষের কাছে গ্রহণ যোগ্য তা বাড়িয়েছে। অনস্ক্রিনের নায়ক যখন অফস্ক্রিনে মাটির কাছাকাছি মানুষের কাছে পৌঁছে যান তখন তাঁকে ভালবাসা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। তাঁর ক্ষেত্রেও এর অন্যথা হয়নি। এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকের অভিনেতা তাঁর আয়ের এক্টা বড় অংশ দান করেন বিভিন্ন সামাজিক কল্যাণ প্রকল্প ও মানুষের সেবায়।

rajanni-4

দক্ষিণী ছবির ভগবান অভিনয় করেছেন তেলেগু, কন্নড়, মালায়ালম, হিন্দি এমনকি বাংলাতেও।  

 

 নিজের জন্মদিন পালন তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন আজ বহুদিন হল। প্রিয় তারকার জন্মদিন সেলিব্রেট করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল এক ফ্যানের। তারপর থেকে জন্মদিন এলেই শহরের বাইরে চলে যান তিনি।

১৯৫০-এর আজকের দিনে বেঙ্গালুরু শহরে জন্ম হয় কিংবদন্তী অভিনেতা।

rajanni-3

জীবন যতই কঠিন পরিস্থিতিতে এনে ফেলুক নিজের স্বপ্নটাকে হারিয়ে যেতে দিতে নেই। ঠিক সেটাই করতে হয় যা মন করতে চায়-এ বোধ তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর জীবন দিয়ে। যতই সাফল্য আসুক মানুষের থেকে দূরে যেতে নেই কখনও এই পাঠ তিনি তাঁর ফ্যানেদের দিয়েছেন তাঁর জীবন দিয়ে। শুধু মনোরঞ্জনের নায়ক নয় রজনীকান্ত জীবন বদলের অনুপ্রেরণা, তাই তিনি সব পারেন!  

এটা শেয়ার করতে পারো

...

Loading...