মাথায় মুকুট নেই। গায়ে ঝলমলে জামা নেই। হীরে, জহরত কিচ্ছু নেই। নেই মন্ত্রী সান্ত্রী আমলা, তবু সে রাজা। ঢাল-তলোয়ার-ভ্য় ছাড়াই নিজের রাজপাটে তার শয়ে শয়ে ভক্ত। তর্জন-গর্জনে মাটি কাঁপলেও এমন রাজাকে ভালোবেসে উপায় নেই, এই রাজা জলদাপাড়ার রাজা। আসলে সুন্দরবনের। প্রমাণ সাইজ এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার। জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের কর্মীরা তার নাম দিয়েছিল ‘রাজা’।
বয়স যখন ১১, তখন সুন্দরী গাছে ঘেরা জল জঙ্গলের রাজত্ব ছেড়ে পাড়ি দেয় পাহাড়ঘেঁষা তরাইভূমে। তাকে একপ্রকার উদ্ধার করে আনা হয়েছিল দক্ষিণ খয়েরবাড়িতে।
নিজের মাটিতেই মাতলা নদী পার হওয়ার সময় কুমীরের মুখে পড়েছিল একবার। খুবলে খেয়ে নিয়েছিল তার পিছনের পা। এই অবস্থায় জঙ্গলে থাকলে সে আর বাঁচতে না, তাই ২০০৬ সালে তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজা চলে আসে তরাই।
Saddened to know that Raja, the oldest living tiger in the world in captivity, is no more.
— Bhupender Yadav (@byadavbjp) July 11, 2022
As the pride of India that lived for over 25 years, Raja will be sorely missed. pic.twitter.com/Fzat3ilrxG
বনকর্মীদের দিন রাতের পরিশ্রমে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে সে। যদিও আঘাত পাওয়া পাটি কোনওদিন আর স্বাভাবিক হয়নি। তাতে ঘাটতি পড়েনি রাজার প্রাণপ্রাচুর্যে। ছটফটে রাজার আকর্ষণে বারবার দর্শকরা ছুটে আসত তার আখড়ায়। দেশ তো বটেই, বিদেশ থেকেই।
রেকর্ড গড়েছিল রাজা। রাজাই পৃথিবীর প্রবীণতম বাঘ। বাঘকূলে তার চেয়ে বয়সে বড় আর কেউ নেই। ২০২২-এর ২৩ আগস্ট ছিল তার জন্মদিন, সেই দিনটা স্পর্শ করলেই রাজার নাম উঠত গিনেস বুক অফ রেকর্ডের খাতায়। আয়োজন শুরুও হয়েছিল, কিন্তু জন্মদিন উদযাপনের সুযোগ আর সে পেল না। তার আগেই নিতে হল চির বিদায়। বার্ধক্যজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়। বাঘের স্বাভাবিক আয়ু ১৮ থেকে কুড়ি বছর। রাজার বয়স হয়েছিল ২৫ বছর ১০মাস
রাজার মৃত্যুতে সন্তান হারানোর শোক পেয়েছেন দক্ষিণ খয়েরবাড়ি ব্যাঘ্র পুনর্বাসন কেন্দ্রের বন কর্মীরা। কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী ভূপিন্দর যাদবও টুইট করে হেন রাজার মৃত্যুতে। রাজা ছিল ভারতের গর্ব। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া। সোশ্যাল মিডিয়াও পৃথিবীর প্রবীণতম বাঘের মৃত্যুতে কাতর।