প্রখর দাবদাহের মধ্যেও যখন আরোহীরা বাতানুকূল কামরায় আরামে সওয়ারি করেন, তখন চালক আসনে বসে ঘর্মাক্ত অবস্থায় অনবরত নিজের দায়িত্ব পালন করে থাকেন রেলের চালকেরা। একে তো প্রকৃতির রোষ, তারপর আবার ইঞ্জিনের সঙ্গে ড্রইভার কেবিন যুক্ত থাকার ফলে সেখানকার তাপমাত্রা বাইরের থেকে অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। এ কারণে অনেক চালককেই অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়। এবার এই ব্যাবস্থার উন্নতি ঘটাতে চালকদের কেবিনেও বাতানুকূল পরিবেশ নিয়ে আসছে ভারতীয় রেলমন্ত্রক।
রেলমন্ত্রকের এই উদ্যোগে স্বভাবতই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন চালকেরা। বিষয়টি নিয়ে চালকেরা জানিয়েছেন, শীতকাল ছাড়া অন্য সময়ে ট্রেন চালানো দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ইঞ্জিনের গরমে বাইরের তাপমাত্রা থেকে ভিতরের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। ফলে শরীরে ডিহাইড্রেশন হয়, ক্লান্তি আসে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ে।
হাওড়ার ডিআরএম ইশাক খান জানিয়েছেন, চালকদের অসুবিধার কথা ভেবেই এই পদক্ষেপ। হাওড়া ডিভিশনে ৫৪টি লোকো ইঞ্জিনের মধ্যে আপাতত ১৬টি বাতানুকূল করা হয়েছে। বাকি ৩০টির ওয়ার্ক অর্ডার তৈরী হয়ে গিয়েছে। ড্রাইভার কেবিন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হলে চালকেরা আরাম পাবেন এবং এর ফলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কমে আসবে।
রেলমন্ত্রক সূত্রের খবর, নতুন যে রেকগুলি আসতে চলেছে তার সবগুলোই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। ধীরে ধীরে সমস্ত ট্রেনের ইঞ্জিনরুম শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হবে। হাওড়াসহ বিভিন্ন ডিভিশনে ইতিমধ্যেই কিছু দূরপাল্লার ও লোকাল ট্রেনের ড্রাইভার কেবিন বাতানুকূল করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য ট্রেনগুলিতেও এই ব্যবস্থা চালু হবে। নতুন রেকের ইঞ্জিনগুলি চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ থেকে একেবারেই শীততাপ নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আসছে। পুরোনো ইঞ্জিনগুলির যেগুলি এখনও অনেকদিন চলার সম্ভাবনা আছে, সেগুলিকে বাতানুকূল করার প্রক্রিয়া চলছে লিলুয়া কারশেডে। যে সমস্ত ইঞ্জিনগুলি শীঘ্রই কর্মক্ষমতা হারাবে বলে মনে হচ্ছে, তাদের আলাদাভাবে বাছাই করা হচ্ছে। নতুন বাতানুকূল ইঞ্জিনের আগমন ঘটলে পুরোনোগুলি আর ব্যবহার করা হবে না।
রেলের এই নয়া সিদ্ধান্তে চালক থেকে সাধারণ যাত্রী, সকলের মুখেই স্বস্তির চিহ্ন ফুটে উঠতে দেখা গেছে। যাত্রীরা মনে করছেন, চালকদের নিরাপত্তা ও যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য খুব জরুরি ছিল এই উদ্যোগ।