রিমঝিম। রূমঝুম। বৃষ্টির আওয়াজ ভালবাসতেন খুব। টিপটিপ ফোঁটার শব্দ তাঁকে পাগল করে দিত।
বোম্বাইতে বর্ষা নামলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন জানলার ধারে। হাতে টেপ রেকর্ডার। বৃষ্টিতে শব্দ ধরতেন। পরে তাই দিয়েই গড়ে উঠত সুরের শরীর।
বৃষ্টি ফোঁটাদের গানে ঘোর লাগা সেই মানুষটির নাম 'পঞ্চম'। ভারতীয় গানের আরডিএক্স। যাই ছুঁয়েছেন তাতেই বিস্ফোরণ!
ছোটবেলায় খুব কাঁদতেন। সুর লাগত পা-এ। ছেলের গলার তেজ দেখে বাবা এসডি আর মা মীরা দেববর্মন ছেলের নাম রেখেছিলেন 'পঞ্চম'। ডাকনাম 'টুলামু।
ছোটবেলায় একটা মাউথ অর্গান ছিল। সেই নিয়ে টইটই চলত সারাদিন।
বাবাকে দেখতেন সুরের খেয়াল বুঁদ হয়ে থাকতে। মা একসময় ঝড় তুলেছিলেন গানের প্রতিযোগিতায়। সুর তাঁর রক্ত। পরে সুরই হয়ে উঠেছিল জীবন।
শুরুটা বাবার সঙ্গে। ১৯৫০-৬০ এক দশক টানা কাজ করেছেন শচীন দেব বর্মনের সঙ্গে। 'চলতি কা নাম গাড়ি' 'কাগজ কে ফুল', 'তেরে ঘর কে সামনে'-এর মতো বিগহিট ছবিতে বাবার সহকারী ছিলেন।
নিজের সঙ্গীত পরিচালনায় প্রথম ছবি 'রাজ'। প্রথম বড় ব্রেক অভিনেতা-পরিচালক মেহমুদের ছবিতে। ' ছোটে নবাব'। হর্ন, গিটার, কাস্টনেট কী নেই সেই ছবিতে!
'ইয়াদো কি বারাত' ছবির 'চুরালিয়া হ্যায়' গানটা মনে পড়ে? কাপ আর প্লেট বাজিয়ে তৈরি করেছিলেন প্রেমের গান। সেই গান আজও অলটাইম হিটসের ওপরের দিকে।
'শোলে' ছবির গান 'মেহবুবা'। হেলেন আরডি ম্যাজিক। খালি বিয়ারের বোতলে সুর তুললেন পঞ্চম। মাত দর্শক!
একবার একটা বেলুনে বাঁশের হুইসেল লাগিয়ে নিলেন। যে শব্দটা জন্ম নিল সেটাই ব্যবহার হয়েছিল 'আব্দুল্লাহ' ছবিতে।
কাঁধে টেপ রেকর্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। আর মনের মতো শব্দ, সুর কানে এলেই রেখে দিতেন সংগ্রহে। নেশার মতো।
সারি সারি জলের বোতল। কোনটা ভর্তি। কোনটা অর্ধেক। কোনটা একটু কম। সব বোতলের শব্দ এক সঙ্গে করে তৈরি হল 'মাঝি রে'।
'চরিত্রহীন' ছবিতে আনলেন 'কেটলড্রাম'। যার ব্যবহার শোনা যায় 'তেরি মেরি ইয়ারী বড়ি পুরানি' গানটিতে।
হাসি-কান্না-কথা-শ্বাসের শব্দ ব্যবহার করতে জানলে সবই হয়ে ওঠে গানের শরীর। পঞ্চম পেরেছিলেন তেমন করে গান গড়তে।
সেমি-ক্ল্যাসিক্যাল হিন্দুস্থানী সঙ্গীতে গিটারের ব্যবহার করেছিলেন। মিলিয়েছিলেন সন্তুর আর গিটারকে।
'তুজসে নারাজ নেহি জিন্দেগি' মাসুম ছবির জনপ্রিয় গান। বারো স্ট্রিং-এর গিটার বেজেছিল তাতে।
ভিক্ষুকদের ডাক থেকে সাঁঝ গোধূলিতে রাখালিয়া চিৎকার সবটাই দামী ছিল তাঁর কাছে। এই জন্যই তিনি পঞ্চম!