‘পকেটে পয়সা থাকলেই, রাবড়ি খাবেন’— শিবরাম চক্রবর্তী।
বাঙালির রাবড়িপ্রীতি ‘সিগনেচার’ হয়ে আছে শিব্রামের আত্মকথনে। শোনা যায় রাবড়ির টানেই নাকি তিনি মুক্তারামের তক্তা ছেড়ে বের হতেন। ঘন দুধের মোটা সরের আস্তরণ জুড়ে জুড়ে যা তৈরি হয় তাই রাবড়ি। বেনারসী রাবড়ির ভারত জোড়া নাম থাকলেও বাংলার রাবড়ির স্বাদই আলাদা।
হুগলী জেলা সদর থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিমি দূরে অবস্থিত দুটি গ্রাম আইয়া ও গাঙপুর। গ্রাম দুটি পাশাপাশি হলেও অবশ্য আলদা আলদা ব্লকে।
মূলত কৃষি প্রধান। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে এই গ্রাম দুটি আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। মিষ্টি প্রেমী মানুষদের কাছে আঁইয়া আর গাংপুর অবশ্য গন্তব্যের জায়গা। কলকাতা তো বটেই প্রায় সারা বাংলা এই গ্রাম দুটিকে চেনে ‘রাবড়ি গ্রাম’ হিসেবে।
প্রত্যন্ত এই দুই গ্রামে ভোর হতে না হতেই শুরু হয়ে যায় দুধ সংগ্রহের ব্যস্ততা। গ্রামের পুরুষরা চাষ- আবাদ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও গ্রামের মহিলা ঘরে ঘরে রাবড়ি তৈরির পেশার সঙ্গে যুক্ত।
ঘরে ঘরে আছে বড় বড় উনুন। সকাল থেকে জ্বলে ওঠে। বড় বড় কড়ায় দুধ জ্বাল দেওয়া হতে থাকে। দুধ ঘন হতে শুরু করলে চলতে থাকে হাত পাখার বাতাস। হাওয়া পেলেই গাঢ় দুধে মোটা সর পড়তে থাকে। সেই সর কাঠি দিয়ে কেটে কেটে কড়াইয়ের গায়ে আটকে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ‘সর তোলা’। সর মোটা হলে তুলে রাখা হয় পাত্রে। তারপর কেটে কেটে আবার ঘন দুধে ফেলা হয়।
অন্যান্য প্রদেশে রাবড়ি ঘন হয়, কিন্তু বাংলার আসল রাবড়ি তুলনামূলক ভাবে পাতলা হয়। সেটাই তার মাহাত্ম্য।
শুরু থেকেই অবশ্য ‘রাবড়ি’ গ্রামের ছবিটা এরকম ছিল না। ২৫ বছর আগে এই গ্রামেরই এক বাসিন্দা নাম মনসা চরণ বাগদী প্রথম রাবড়ি বানানো শুরু করেন বাণিজ্যিকভাবে।
কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যান্য অংশে রাবড়ি সরবরাহ হয় হুগলির এই অংশ থেকে। অনেকেই গ্রামে আসেন রাবড়ি গ্রামে রাবড়ি তৈরি দেখবে বলে। শহরের দোকান থেকে দাম কিছুটা কম বলে এখান থেকে সরাসরি কিনে নিয়ে যাওয়ার আগ্রহও থাকে।