'আমাদের খুঁজলে পাবে, সোনায় লেখা ইতিহাসে। আমরা মোহনবাগান....'। এগারো নামক হিট বাংলা ছবির হিট গান। সত্যিই ক্লাবকে খুঁজলে পাওয়া যায় সোনায় লেখা ইতিহাসে। আর যদি সেই লেখা যদি বিশ্বকবির কলমে হয়? হ্যাঁ, একাধিকবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় মোহনবাগানের কথা উঠে এসেছে।
রবি ঠাকুরের অন্তত তিনটি লেখায় মোহনবাগানের উল্লেখ মেলে। রবি ঠাকুরের লেখা ‘সে’ বইটিতে তিনি নানা মজার ঘটনা লিখেছিলেন। নাতনি পুপেকে খুশি করার জন্য। এই বইতে দু’বার মোহনবাগানের উল্লেখ মেলে। ‘দুই বোন’ উপন্যাসে দেখা যায়, ঊর্মিমালার মন জয় করার জন্য শশাঙ্ক তাঁকে মোহনবাগানের খেলা দেখতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে।
তাছাড়া রবীন্দ্রনাথ একবার লিখছেন, 'স্মৃতিরত্নমশায় মোহনবাগানের গোলকিপারি করেছেন।' আরেকবার লিখেছেন, 'মোহনবাগানের খেলা দেখতে গিয়ে সাড়ে তিন আনা পয়সা পকেটমারি হয়ে গেছিল।' এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ‘শেষের কবিতা’র শুরুতে মোহনবাগানের উল্লেখ মেলে।
কবি মোহনবাগানের খবরাখবর রাখতেন। জানা যায়, শান্তিনিকেতনে কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল গোষ্ঠ পালের। তাঁর চেহারা দেখে বিশ্বকবি বলেছিলেন, “বুঝতে পারছি কেন চীনের প্রাচীর বলা হয়।”
কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ীর লেখা থেকে জানা যায়, গগনেন্দ্রনাথের ঠাকুরও মোহনবাগানের খেলা দেখতে মাঠে গেছিলেন। বাড়ি ফিরে তিনি এঁকেছিলেন কার্টুনও। অবনীন্দ্রনাথের ‘লম্বকর্ণ পালা’ নামে নাটক যা রাজশেখর বসুর রচনা অবলম্বনে লেখা সেই নাটকে মোহনবাগানের উল্লেখ মেলে। কবি করুণানিধন বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯১১র ঐতিহাসিক শিল্ড জয় নিয়ে তাঁর লেখা গান লিখেছিলেন,
" জেগেছে আজ দেশের ছেলে পথে লোকের ভিড়
,অন্তঃপুরে ফুটল হাসি বঙ্গরূপসীর।
গোল দিয়েছে গোরার গোলে বাঙালির আজ জিত,
আকাশ ছেয়ে উঠছে উধাও উন্মাদনার গীত।
আজকের এই বিজয়বাণী ভুলবে নাকো দেশ,
সাবাশ সাবাশ মোহনবাগান! খেলেছ ভাই বেশ। "
এভাবেই সোনার কলমে ছড়িয়ে আছে মোহনবাগান।
১৯১১ সালে মোহনবাগান ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে পরাজিত করে প্রথম ভারতীয় দল হিসেবে আিএফএ শিল্ড জয় করে। দলের অধিনায়ক ছিলেন শিবদাস ভাদুড়ী। উল্লেখ্য, এই খেলায় মোহনবাগানের ফুটবলাররা খালি পায়ে খেলেছিল। অন্যদিকে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টের ফুটবলারদের যথোপযুক্ত পোশাক ছিল। মোহনবাগানের এই জয়টিকে ভারতের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা আখ্যা দেওয়া হয়।
এই মোহনবাগান নামের সঙ্গে আবার শোভাবাজার রাজবাড়ির যোগ রয়েছে। মোহনবাগান লেন আর ফড়িয়াপুকুর স্ট্রিটের মাঝে ছিল এক বিরাট বাগান, যার নাম ছিল “মোহনবাগান”। এর মালিক ছিলেন রাজা নবকৃষ্ণ দেবের ছেলে গোপীমোহন দেব। তাঁর নামাঙ্কিত বাগানই ছিল আজকের মোহনবাগান।